‘আমাদের কথা স্পষ্ট, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে’

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, অবশ্যই এই দেশে একটা নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই জনগণ তাদের মতামত দেবেন। সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যাতে জনগণ তাদের ভোট যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারে।’

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সভার উদ্বোধনের সময় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষকদের সবচেয়ে বেশি করুণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। কৃষকদের এখন মেরুদণ্ড বলতে যেটা বুঝায় সেটা নেই। একদিকে ঋণে জর্জরিত, অন্যদিকে ফসলের মূল্য পায় না। ধান উৎপাদন করে কিন্তু সময়মতো ধানের মূল্য পায় না। পরে মধ্যসত্ত্বভোগীরা বেশি দামে বিক্রি করে। যার ফলে আজকে চালের দাম ৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আজকে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকে সকালে দেখলাম পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কৃষকেরা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অংশ। তারাই সবচেয়ে বেশি। আপনাদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। যাতে করে আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য যাতে পায় সেটা আপনাদের দেখতে হবে। তাদের সঙ্গে থেকে আন্দোলন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় একটা পরীক্ষা। আজকে ভয়াবহ দখলদারি, দানবীয় ও অনির্বাচিত একটা সরকার জোর করে বসে আছে। এই দুঃসময়ে কৃষকদের সংগঠিত করে ভয়াবহ দানবীয় পাথরকে সরাতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

এই সরকার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমাদের ওপরে অত্যাচার নির্যাতন করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, এদেশের মানুষের ওপরে নির্যাতন করছে। আজকে শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নাই। আওয়ামী লীগের ওপরে কোনো আস্থা নাই। কারণ এরা এই দেশের মানুষের যে স্বপ্ন, যে আশা-আকাঙ্খা সবগুলোকে চুরমার করে দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা আগের রাতে ভোট চুরি করে নিয়ে যায়, যারা ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। আজকে তারা মিডিয়াকে করায়ত্ব করেছে। সাংবাদিকদের হাতপা বাঁধা। সাংবাদিক কনক সারোয়ার জানের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আমেরিকায় একটি নিউজ পোর্টাল চালায়। সেই অপরাধে তার অসহায় বোনকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সময় আসবে। বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশ করার জন্য এদের জনগণ একদিন বিচার করবে। এদের কাঠগড়া দাঁড়াতে হবে। তারা সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশকে একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘‘এখন আওয়ামী লীগ কোথায়? সব জায়গায় তো আমলা লীগ। যেখানে যাবেন, ডিসি-এসপি-ওসি এরাই হলো বড় সাহেব। আওয়ামী লীগের চাইতে তারা অনেক বড়। তারা নিজেরাই বলে, ‘মাছের রাজা ইলিশ, আর দেশের রাজা পুলিশ।’ এই যে অবস্থা, এর জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’’

কৃষি আন্দোলন, কৃষকদের আন্দোলন ছাড়া কখনোই সফল হওয়া যাবে না উল্লেখ করে সাবেক এই কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি, এটা কখনোই সফল হবে না, যদি আমরা কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে না পারি। অর্থাৎ কৃষকদের জাগিয়ে তুলতে হবে।’

কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক টিএস আইউব ও মোশারেফ হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।