আরাফাত রহমান কোকোর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার, ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় ও পারিবারিকভাবে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ইন্তেকাল করেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আরাফাত রহমান কোকো। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। মৃত্যুর চার দিন পর ২৮ জানুয়ারি তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়। ওই দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
আরাফাত রহমান কোকো এমন সময়ে মারা যান যখন তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ ছিলেন। সরকার তাঁর বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে এবং বাসার গেটে তালা লাগিয়ে রাখে। ছেলের মৃত্যুর সংবাদে অচেতন হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। বারবার মূর্ছা যান তিনি। বিদেশে ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করলেও আদরের ছোট ছেলে এভাবে মারা যাবেন, এমনটি খালেদা জিয়ার কল্পনায়ও ছিল না। পাশে থাকা পরিবারের স্বজনরা সান্ত্বনা দিতে গেলেও তাঁকে থামানো যায়নি। ছেলের মৃত্যুতেও তিনি জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ও বেড়ে ওঠা
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৬৯ সালে ঢাকায়। শিক্ষাজীবনে ঢাকার বি এফ শাহীন কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে জিয়াউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় চলে এলে কিছুদিন জয়দেবপুরে থাকার পর বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মায়ের সঙ্গে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এরপর বড় খালা খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন পরিবারের সবাই। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা মা খালেদা জিয়া ও বড় ভাই তারেক রহমানসহ আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করে। তাঁরা ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা-ভাইসহ আরাফাত রহমান কোকো মুক্তি পান।
ব্যক্তি জীবন
আরাফাত রহমান কোকোর বাবা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি, মা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী এবং বড় ভাই তারেক রহমান বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অনেকটা পর্দার আড়ালে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এড়িয়ে খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডেই সময় ব্যয় করতেন তিনি।
পারিবারিক জীবন
আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান। তাঁদের জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান নামের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা মায়ের সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করছেন।
ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান কোকো
২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। এ ছাড়া ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
জেল-জুলুম, প্রবাসজীবন গ্রহণ
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। ২০০৮ সালের ১৮ জুলাই চিকিৎসার জন্য সপরিবারে ব্যাংকক যান তিনি। এরপর চিকিৎসা শেষে মালয়েশিয়া চলে যান এবং সেখানেই সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত।
২০১২ সালে খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে গেলে সেখানে আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে খালেদা জিয়া ব্যাংককে যাত্রাবিরতি দিয়ে ছোট ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে আরাফাত রহমান কোকোর শেষ সাক্ষাৎ। সবশেষ ২০১৪ সালে সৌদি আরবে জিয়া পরিবার একত্রিত হলেও আসতে পারেননি আরাফাত রহমান কোকো।
কোকোর বিরুদ্ধে যত মামলা
জরুরি অবস্থার সেনাসমর্থিত সরকারের সময় দেশের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো বিভিন্ন অভিযোগে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা দেওয়া হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে গুলশান থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপির মামলায় ভাইয়ের (তারেক রহমান) সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরাফাত রহমান কোকোকেও আসামি করা হয়।
এরপর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুদক। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়। মামলায় পলাতক দেখিয়ে কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ আরেকটি মামলা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি
আরাফাত রহমান কোকোর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—২৪ জানুয়ারি সোমবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বনানীর কবরস্থান প্রাঙ্গণে কোরআনখানি এবং বিশেষ দোয়া মাহফিল। একই দিন দুপুর ১২টায় দলের পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোকোর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া আয়োজন।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানায় বিশেষ দোয়া এবং এতিম ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
এ ছাড়া বিকেল ৫টায় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
সার্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনব্যাপী এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।