আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেবে পুলিশ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/03/16/aaraabh_khaan.jpg)
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রবিউল ইসলাম ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান আরাভ খান। পুলিশ বলছে, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানসহ অন্যান্য, যাদের স্টার বলা হয়; তারা সেখানে (দুবাই) হাজির হয়েছেন। আরাভ খান একজন মার্ডারার, তিনি একজন খুনি। তিনি একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে খুন করেছেন। তাদের অবগত করার পরও দুবাইয়ে গিয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা আসলে দুঃখজনক। তারা কেন করেছেন, আমি জানি না। তবে, আরাভ খান কীভাবে দেশত্যাগ করলেন, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এরমধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যায়।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রবিউল ইসলামের একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। সেখানে তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে হৃদি খান। ওই পাসপোর্টের নম্বর ০৩৮৫১৮৮। হত্যা মামলার পর ভারতে গিয়ে আরাভ খান নাম দিয়ে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর উদয় সংঘ ক্লাব এলাকার বাসিন্দা হিসেবে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। জালিয়াতি করে বানানো ওই পাসপোর্টে তাঁর বাবার নাম লেখেন জাকির খান, মায়ের নাম দেন রেহানা বিবি খান এবং স্ত্রীর নাম সাজিমা নাসরিন। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। রবিউল ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আপন আরাভ নাম নিয়ে দুবাই যাতায়াত শুরু করেন। ওই পাসপোর্ট দিয়ে ইউরোপেও ভ্রমণ করেন।
ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, নিজেকে বাঁচাতে প্রতারণার মাধ্যমে আবু ইউসুফ নামের আরেক যুবককে রবিউল সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়। রবিউলের নাম–ঠিকানা ব্যবহার করে আবু ইউসুফ ২০২০ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস জেলে থাকার পর সেই তরুণ একপর্যায়ে সত্য প্রকাশ করে দেন।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি আলোচনায় আসেন আরাভ। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দিয়ে দুবাইয়ে তার শোরুম উদ্বোধন করা হবে- এই ঘোষণার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। চলচ্চিত্র পরিচালক-উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, চিত্রনায়িকা দিঘী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকেও দুবাইয়ে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। দুবাইয়ে তারকাদের আমন্ত্রণ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চলছে নানা গুঞ্জন। ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আরাভ খান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে সোনার দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। দুবাইয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয়েছে আরাভ জুয়েলার্স। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।
যেভাবে খুন হন এসবির পরিদর্শক
২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত শেষে পরের বছরের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতো একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের আটকে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।
মামুন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে (২১) আসামি করা হয়। এ ছাড়াও নিহত মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) ও দুই কিশোরীকে আসামি করা হয়।
পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলাম নামের একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর ওই তরুণ বলেন, তিনি রবিউল ইসলাম নন, তার আসল নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কথামতো তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি। এরপর আদালত বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) প্রতিবেদন দিতে বলেন।