আ.লীগ কখনও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না : নোমান
‘আওয়ামী লীগ কখনও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত করে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকালে দৈনিক দিনকালসহ সব বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে আবদুল্লাহ আল নোমান এ মন্তব্য করেন। জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত করে। ১৯৭৫ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল।’
এই বিএনপিনেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা গণতন্ত্র সহ্য করতে পারে না। তাই তারা স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় গিয়ে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে সবাইকে বাকশালে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। বর্তমানে বিনা ভোটের আওয়ামী সরকার তাদের প্রকৃত দর্শন—একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করছে নতুন আঙ্গিকে। সে কারণে তারা সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর জুলুম চালাচ্ছে এবং হুমকির সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ব কায়েম করেছে।’
জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার, আবদুর রহিম, রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান আরও বলেন, ‘আজ জাতিকে মিথ্যা ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ। যারা এ সত্যকে অস্বীকার করে নতুন তথ্য হাজির করাচ্ছে, তারা ইতিহাস বিকৃতকারী। জাতি এদের ক্ষমা করবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে সব গণমাধ্যমের কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই তাঁরা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাঁদের এখন সেলফসেন্সরশিপ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষানলের শিকার হয়ে বন্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন। সাংবাদিকরা খুন হচ্ছেন, বিচার পাচ্ছেন না।’
দুদু আরও বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে গণমাধ্যমের যে কোনো স্বাধীনতা নেই, তা আবারও প্রমাণিত হলো। দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের মুখপত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিরোধী দলের একমাত্র পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল সরকারের চরম হিংসা চরিতার্থ করার বহিঃপ্রকাশ। সরকারের অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী কর্মকাণ্ড, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি, হত্যা, গুম, খুন, প্রহসনের সত্য সংবাদ নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করায় দৈনিক দিনকাল সরকারের চরম রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এক ভয়ানক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো আজ হরণ করা হয়েছে। ভাষা আছে কিন্তু বাক স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যম আছে, কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। আদালত আছে, ন্যায়বিচার নেই। সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের তথ্য যাতে প্রকাশ করা না যায়, সেজন্য একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই ১৯১টি অনলাইন বন্ধ করেছে সরকার।’
দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান এ সাংবাদিকনেতা।