আল্লামা শফীর মৃত্যুর ঘটনায় সরকার মামলা করেনি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় সরকার মামলা করেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সংক্ষুব্ধ যেকোনো ব্যক্তি মামলা করতে পারেন। মামলা সরকার করেনি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মামলা করেছে, তারা মামলা প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের কিছু করার নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়িসহ দেশের ছয়টি জেলায় একযোগে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী খাগড়াছড়ি থেকে অনলাইনের মাধ্যমে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় এ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পাসপোর্ট সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করে। প্রতিবেশী অনেক বড় দেশ যেটি চিন্তা করতে পারেনি, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে তা করিয়ে দেখিয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার ৭২টি অফিসে এ সেবা পৌঁছে গেছে। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেবার উদ্বোধন করেছিলেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এক লাখ মানুষ এ সেবা পেয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এক কোটি মানুষের মধ্যে এ সেবা পৌঁছে যাবে।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্যের নিরাপত্তা দেওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো বংলাদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য। কাজেই এগুলো রক্ষার দায়িত্ব জনগণেরই।’

মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে তিনজন সেবা গ্রহীতার হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেন। পরে তিনি পাসপোর্ট কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুজ্জামান, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী, ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক  ব্রিগেডিয়ার সাঈদুর রহমান, শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মিজ বাসন্তী চাকমা এবং অনলাইনে যুক্ত হন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৭ ডিসেম্বর সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিবসহ ৩৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা হয়। চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নম্বর আদালতের বিচারক শিবলু কুমার দে ঘটনা তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী আল্লামা শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন জানান, মামলায় তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনা হেফাজতের বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইন্ধনে হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে মাওলানা মো. নাসির মুনিরকে। আর দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার জন্য আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর নামও রয়েছে আসামির তালিকায়।

মামলার অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামিরা আল্লামা আহমদ শফীকে নাজেহালের পাশাপাশি তাঁর কক্ষ ভাঙচুর ও মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর মুখ থেকে অক্সিজেন কেড়ে নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর অফিস থেকে বিভিন্ন মূল্যবান কাগজপত্রের পাশাপাশি ৬৮ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আনা হয়।

মামলার আইনজীবী আবু হানিফ জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই মামলাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দাবি করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এ ঘটনায় করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা মিলনায়তনে গতকাল বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরী এ কথা বলেন। তিনি হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ সময় মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. নূরুল আবছার আজহারী।

এতে বলা হয়, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁর মৃত্যু অস্বাভাবিক উল্লেখ করে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি এবং দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ বিনষ্ট করার চক্রান্ত। অথচ আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এ ঘটনায় করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, এ মামলা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করার হীন ষড়যন্ত্র। হয়রানির চেষ্টা করা হলে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের সঙ্গে পরামর্শ করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন হেফাজতে ইসলামের আমির।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে ও মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক পদ থেকে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিনও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্রদের বিক্ষোভ বন্ধ না হওয়ায় পরের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে মহাপরিচালক আহমদ শফী নিজেই তাঁর পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন।

পরবর্তী সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আহমদ শফীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।