‘আল্লাহু আকবর’ বলেই গুলি, হলি আর্টিজানের কালরাতের ভাষ্য

Looks like you've blocked notifications!

 রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে শেফ হিসেবে কাজ করতেন আর্জেন্টিনার নাগরিক দিয়াগো রসিনি। ঘটনার সময় তাঁরা পাঁচ-ছয়জন নিচতলার কিচেনে কাজ করছিলেন। গুলির শব্দ শুনে  দিয়াগো দৌড়ে দোতলার ছাদে উঠে যান। সেখানে তাঁদের মতো আরো ১০-১২ জন লুকিয়ে ছিলেন। দিয়াগো ও হলি আর্টিজানের কিচেনকর্মী বাচ্চু পাটোয়ারী ছাদের পশ্চিম পাশে ছিলেন। জীবন বাঁচাতে তাঁরা রেস্তোরাঁ ও পাশের একটি ১০তলা ভবনের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় লাফিয়ে পড়েন।
প্রাচীরের তারকাঁটায় বাচ্চু ও দিয়াগোর হাতের কিছু অংশ কেটে যায়। কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর সাহায্য চাইলে পুলিশ তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সকালে রেস্তোরাঁর মালিক সাজ্জাদ মেহেদী এসে তাঁদের কর্মচারী বলে শনাক্ত করেন।
হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর কিচেনকর্মী বাচ্চু পাটোয়ারী এভাবেই তাঁর জবানবন্দিতে পুলিশের কাছে বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা দেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁতে হামলা চালান বন্দুকধারী জঙ্গিরা। রাতেই ২০ জনকে হত্যা করেন। উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

আগামীকাল বুধবার আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘিরে আদালত চত্বর কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে রায় ঘোষণা করা হবে। তার আগে কারাগারে থাকা ছয় আসামিকে হাজির করা হবে। বাকি দুই আসামি পলাতক আছেন।
‘একটু আর্তনাদ, তারপরই নিথর জাপানি’
জবানবন্দিতে বাচ্চু পাটোয়ারী বলেন, “ওই রাতে টেবিল রিজার্ভ করেছিলেন ১৮ জন। এক টেবিলে ইতালির সাত নাগরিক বসেছিলেন, আরেক টেবিলে তিন বা চারজন হবে। কেউ একজন ইতালীয় পাস্তার অর্ডার দেন, শেফ রসিনি তখন রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে কয়েকজন তরুণ ভারী ব্যাগে অস্ত্রশস্ত্রসহ রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়েন। ভয়ে আমি পালিয়ে ছাদে চলে যাই। আর শুনতে পাই, বন্দুকধারীরা  ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি  দিয়ে বিদেশিদের খুঁজছে আর গুলি করছে।”
“গুলির শব্দে আমরা তিনজন আর এক জাপানি লুকিয়ে পড়ি নিচতলার কফি তৈরির ছোট কক্ষের ভেতরে। জাপানি লোকটি ভয়ে কফি তৈরির টেবিলের নিচে বসে পড়েন। হঠাৎ গুলি করে দরজা ভেঙে এক জঙ্গি ভেতরে এসে বলল, ‘তোদের মারব না, তোরা বের হ। এখানে কোনো বিদেশি আছে?’ মাথার ওপর হাত তুলে আমরা তিনজন বের হই, তখন টেবিলের নিচে থাকা ওই জাপানি দেখে ফেলে জঙ্গি। তারপরই গুলি। জাপানি একটু আর্তনাদ করে টেবিলের নিচে নিথর হয়ে গেলেন”, বলেন বাচ্চু পাটোয়ারী।
‘প্রথম ঢুকেছিলেন নিবরাস ও মোবাশ্বের’
হলি আর্টিজানে জিম্মিদশা থেকে বেঁচে আসা ৩২ জনের বেশির ভাগেরই জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন তদন্তকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীর কর্মকর্তারা। ৩২ জনের মধ্যে পাঁচজন বিদেশিও আছেন। তাঁদের দুজন শ্রীলঙ্কার, একজন ইতালির, একজন আর্জেন্টিনার বংশোদ্ভূত ইতালীয় ও একজন জাপানি। মুক্তি পাওয়ার পর বিদেশিরা দেশত্যাগ করেন। বাকিদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, হামলার সময় হলি আর্টিজানের সিসিটিভি ক্যামেরা সচল ছিল না। এ কারণে ওই রাতে রেস্তোরাঁর ভেতরে কী ঘটেছিল, তা জানতে জীবিতদের জবানবন্দিই একমাত্র উপায়। তবে জিম্মিদের কেউই পুরো ঘটনা বলতে পারেননি। একেকজন একেক স্থানে বন্দি অবস্থায় ছিলেন, যে কারণে তাঁরা ঘটনার খণ্ড খণ্ড দৃশ্য দেখেছেন। আর সেভাবেই বিবরণ দিয়েছেন। বেঁচে যাওয়া লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজানে প্রথম ঢুকেছিলেন নিবরাস ইসলাম ও মীর সামেহ মোবাশ্বের। এরপরই ঢুকেন রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। সবার কাঁধে ছিল একটি করে ব্যাগ। স্বয়ংক্রিয় একে-২২ রাইফেল ছিল তিনজনের কাছে। আরো সাতটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ছিল। ছোট অস্ত্রের মধ্যে পাঁচজনের হাতে ছিল পাঁচটি গুলিভর্তি পিস্তল।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, কমাণ্ডো অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারিতে ৩১১টি গুলির খোসা ও ১২৭টি তাজা গুলি পাওয়া গেছে। আর পাওয়া গেছে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের নয়টি পিন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, পাঁচ জঙ্গির হাতে প্রায় ৫০০ গুলি ও ১০-১২টি গ্রেনেড ছিল। চাপাতি ও ছোট আকারের চাকু সবার হাতে থাকলেও তলোয়ার ছিল একজনের কাছে।
‘আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে হামলা’
ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের গাড়িচালক সবুজ কুমার ওঝা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হাসনাত করিম, তাঁর স্ত্রী শারমিনা করিম ও দুই ছেলেমেয়েকে নামিয়ে তিনি গেটের কাছে গাড়ি পার্ক করে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তিনি দেখেন, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চার-পাঁচজন হলি আর্টিজানের ভেতরে ঢুকে গেট আটকানোর চেষ্টা করছেন। ওই সময় একজন প্রহরী দৌড়ে তাঁদের কাছে আসেন। প্রহরী দরজা বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে, একজন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে পিস্তল বের করে গুলি করেন। এর পরই শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি।
সবুজ কুমার আরো বলেন, তিনি ভয়ে দৌড়ে পাশের লেকভিউ হাসপাতালের গাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় আরো কয়েকজন হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়েন। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই আটকে ছিলেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
হলি আর্টিজানের এক কর্মচারী জবানবন্দিতে বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে লম্বামতো ছেলেটা (নিবরাস ইসলাম) আগে একবার এসেছিলেন। তাঁরা হলি আর্টিজান সম্পর্কে আগে থেকেই সব জানতেন। জঙ্গিরা ভেতরে ঢুকে প্রথমে জানতে চান, বিদেশি শেফরা কোথায়?
হলি আর্টিজানের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, যুবকরা ভেতরে ঢুকেই ফাঁকা গুলি শুরু করেন। আক্রমণের সময় তাঁরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলেছেন। অতিথিরা ভয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ছেন। তিনি দোতলায় উঠে যান। সেখানে দেখেন দুই জঙ্গি দোতলায় পিৎজা তৈরির কিচেনের সামনে দাঁড়িয়ে গুলি করছেন। তখন পর্যন্ত কারো গায়ে গুলি লাগেনি।
‘আমরা যে যেভাবে পারি, ছাদে চলে যাই। আমার সঙ্গে ইতালিয়ান শেফ জিয়ান গ্যালিয়াজো বসিনি বের হয়ে আসেন’, যোগ করেন হলি আর্টিজানের তত্ত্বাবধায়ক।
‘বিদেশিদের খোঁজছিলেন জঙ্গিরা’
হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা করিম তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, স্বামী, ছেলে রায়হান করিম (৮) ও মেয়ে শেফা করিমকে (১৩) নিয়ে তিনি হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন মেয়ের জন্মদিনের জন্য। তাঁর পরিবার বসেছিল হলি আর্টিজানের নিচতলার একটি টেবিলে। জঙ্গিরা ভেতরে ঢুকেই প্রথমে বিদেশিদের নিচতলায় জড়ো করেন। একপর্যায়ে এক যুবক (তাহমিদ হাসিব খান) ও তাঁর দুই বান্ধবী (ফাইরোজ মাহিন ও তাহানা তাসমিয়া) এবং একজন বয়স্ক লোককে (সত্যপ্রকাশ) জঙ্গিরা তাঁদের টেবিলে নিয়ে আসেন। পরে আরো দুজন কর্মচারীকে এনে তাঁদের সঙ্গে বসিয়ে রাখেন। অন্য একটি টেবিলে আরো কয়েকজন বসা ছিলেন।
জঙ্গিরা শারমিনা করিমের দুই শিশুসন্তানকে দেখিয়ে বলে, ‘ওদের কান ও চোখ ঢেকে রাখেন।’ এরপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। জিম্মি করার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা বিদেশি নাগরিকদের প্রথমে গুলি করেন। এরপর ছুরিকাঘাতে তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। জিম্মিদের কেউ কেউ এ সময় দৌড়ে দোতলায় ওঠার চেষ্টা করলে সিঁড়ির কাছেই তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়।  হামলার সময় একজন জাপানি একটি বড় ফ্রিজের ভেতর লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। জঙ্গিরা তাঁকে গুলি করলে তিনি ফ্রিজের ভেতরেই পড়ে যান। পরে ফ্রিজের ভেতর তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
শারমিনা করিম আরো বলেন, রাতে তাঁদের টেবিলে থাকা একটি মেয়েকেও জঙ্গিরা ফোন করার সুযোগ দেন। এ সময় তাঁরা ফোনের স্পিকার অন করে রাখতে বলেন। হাসনাতের ফোন ব্যবহার করে তাঁরা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট (বিডিনিউজ, আল-জাজিরা, এনডিটিভি, বিবিসি) ভ্রমণ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গিদের কথা শুনে মনে হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের ছবি তুলে তাঁরা সেটা আপলোডও করছেন। জঙ্গিরা পালাক্রমে তাঁদের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা রেস্তোরাঁর বিদেশি আছে কি না, তা খুঁজে দেখছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা এভাবেই সময় পার করেছেন। এ সময় অনেক কর্মচারী ভয়ে বাথরুম ও অন্য স্থানে লুকিয়ে ছিলেন।
‘বাঙালি ভাইদের কোনো ভয় নাই’
হলি আর্টিজানের কর্মচারী সমীর বাড়ৈ জবানবন্দিতে বলেন, “ভয়ে নয়জন আশ্রয় নেই কিচেনকর্মীদের (নিচতলার) ওয়াশরুমে এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অস্ত্রধারী দুই জঙ্গি কিচেনের ওয়াশরুমের সামনে এসে ডাক দিয়ে বলেন, ‘বাঙালি ভাইদের কোনো ভয় নাই। তোমরা দরজা খোলো। নতুবা ওপর থেকে ফায়ারিং করতে বাধ্য হব।’ তখন আমরা দরজা খুলে দিয়ে দেখি একজন আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে আছেন এবং আরেকজনের হাতে রাইফেল।”
‘আমরা ওয়াশরুম থেকে মাথা নিচু করে একে একে নয়জন বেরিয়ে আসি। আমাদের দেখার পর পুনরায় সন্ত্রাসীরা আমাদের ওয়াশরুমের মধ্যে ঢুকতে নির্দেশ দিলে আমরা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীরা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেন’, বলেন সমীর বাড়ৈ। তিনি আরো বলেন, শুরুর ঘটনার পর তাঁরা আর কিছুই দেখেননি বা জঙ্গিদের কথোপকথন শোনেননি। শুধুই গুলির আওয়াজ শুনেছেন।
‘মাছ ও চিংড়ি দিয়ে সেহরি’
ওয়াশরুমে আটকে পড়েছিলেন হলি আর্টিজানের সহকারী বাবুর্চি আকাশ খান। তিনি পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে বলেন, “একজন টয়লেটে জিম্মি অবস্থার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। আমাদের সন্দেহ, ফেসবুকের পোস্ট দেখেই জঙ্গিরা জানতে পারেন, আমরা টয়েলেটে অবস্থান করছি। তাদের হুমকি শুনে আমরা ভয়ে দ্রুত দরজা খুলে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা সবাইকে হাত উঁচু করে একজন একজন করে বের হতে বলেন। কথামতো সবাই মাথার ওপর হাত তুলে বের হই। তখন তারা বলেন, ‘আমরা বাঙালি মুসলমানদের মারব না। আমরা মারব বিদেশি, যারা অমুসলিম।’”
আকাশ আরো বলেন, ‘জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর কর্মীদের বলেন, বাকি জিম্মিদের যেন চা-কফি দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুসলমানরা যখন সাহেরি খান, তখন তাঁরা কর্মীদের বলেন, মাছ ও চিংড়ি রান্না করে তাঁদের যেন খাওয়ানো হয়। তাঁদের জন্য রান্না করে শিশির নামের এক কর্মচারী। সে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে বেঁচে যায়।’
“সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সন্ত্রাসীরা বাইরে জিম্মি থাকা আরো চারজন বাবুর্চির মধ্যে একজনকে আমাদের টয়লেটের বন্ধ দরজা খুলে দিতে বলেন। তখন তিনি দরজা খুলে দেন। আমি বেকারির বড়কক্ষে গিয়ে দেখি লাশ আর লাশ। রক্তে ভরে গেছে মেঝে। এ সময় কয়েকজনকে লাশের পাশে একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হয়েছে, তাঁরা মনে হয় সাদাপোশাকে আইনের লোক। আর সন্ত্রাসীরা সবাইকে মেরে পালিয়ে গেছে। আমি তাদের গিয়ে বলি, ‘ভাই, এতগুলি মানুষ মারল আর আপনারা কিছু করতে পারলেন না।’ এই কথা শুনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে লোকগুলো হাসতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বলেন, ‘আমরাই তো মেরেছি।’”
‘জান্নাতে চলে যাব’
আকাশ খান আরো বলেন, “সকালে সেনা অভিযানের কিছু সময় আগে জঙ্গিরা আমাকে বলেন, ‘তুমি যে লাশ দেখতাছ, আমরাও কিছুক্ষণ পরে এভাবেই পড়ে থাকব। আর চলে যাব জান্নাতে।’ এরপর হাসতে হাসতে জঙ্গিরা বলতে থাকেন, ‘আমরা যাই, জান্নাতে দেখা হবে তোমাদের সঙ্গে। তুমি চলে যাও। কিছুক্ষণ পরে এখানে গুলি আসবে। সেই গুলি তোমারও লাগতে পারে।  যাও, যাও’ বলে আমাকে তাড়িয়ে দেন তাঁরা।”
“এই কথা শুনে আমি দ্বিতীয়তলায় একটি কক্ষে চলে যাই। ঠিকই কিছুক্ষণ পরে শুরু হয় গুলি। আমরাও বাঁচাও, বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করি। যাতে সেনাবাহিনী আমাদেরও জঙ্গি ভেবে গুলি না করে। সেনাবাহিনী ওপরে গিয়ে অস্ত্র তাক করে আমাদের সবাইকে নিচে আসার কথা বললে মুহূর্তে আমি একজন সেনার কাছে জানতে চাই, সন্ত্রাসীদের কী হয়েছে? জবাবে ওই সেনাসদস্য বলেন, গুলিতে সবাই মারা গেছেন। নিচে নেমে এসে দেখি একসঙ্গে পাঁচ জঙ্গির লাশ পড়ে আছে। এরপর সেনাসদস্যরা উদ্ধার হওয়া ১৩ জনকে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে যান।”