আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলের হামলায় প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা
মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলের হামলা ও ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে গতকাল মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ চিঠিতে তিনি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা প্রাঙ্গণে সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্বের যে কোনো স্থানে এ ধরনের জঘন্যতম হামলা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমরা হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক এবং আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই কাপুরোষচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে এ ধরনের জঘন্যতম হামলার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘আমার দেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি আল-আকসা মসজিদ এলাকায় বর্বরোচিত হামলায় নিরীহ মুসল্লি ও সাধারণ জনগণের হতাহতের ঘটনায় দুঃখ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সে দেশের সরকার ও জনগণের লক্ষ্য অর্জনে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার ভোরে ইসরায়েল আকাশপথে গাজায় কয়েকশ বোমা ফেলেছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একটি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। অপর একটি ভবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা রকেট হামলার উৎসস্থলে এবং হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এ ছাড়া হামাসের গোয়েন্দা নেতাদের হত্যা করতে পেরেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
২০১৪ সালের পর এটিই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ। সেবার সাত সপ্তাহের যুদ্ধে দুই হাজার ১০০ গাজাবাসী ও ৭৩ ইসরায়েলি নিহত হয়। এবারও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিদূত টর ওয়েননেসল্যান্ড টুইটে বলেছেন, ‘সত্বর হামলা বন্ধ করুন। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছি আমরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব পক্ষের নেতাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজায় যুদ্ধ হলে তার পুরো খেসারত হিসেবে সেখানকার সাধারণ মানুষকেই সব ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জাতিসংঘ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। এখনই সংঘাত বন্ধ করুন।
বুধবার ভোরে গাজাবাসী হঠাৎ দেখেন, তাদের বাড়িঘর কাঁপছে। ইসরায়েলি মিসাইলের আঘাতে আকাশ আলোময় হয়ে ওঠে। হামাসের ছোঁড়া রকেট লাঞ্চার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আটকে যায়। কিছু কিছু রকেট লাঞ্চার সেই ব্যবস্থা ভেদ করে হামলা চালায়।
ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের কাছে আরব ও ইহুদি বসতিওয়ালা লড নামের একটি শহরে রকেট হামলায় দুজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। একটি গাড়িতে রকেট বোমা পড়লে এই দুজনের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে তারা গাজায় বহুতল ভবনে হামলার জবাবে বিরসেবা ও তেল আবিবে তারা ২১০টি রকেট বোমা ছুঁড়েছে।
গত শুক্রবার মাহে রমজানের শেষ জুমার নামাজে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি প্রতিবারের মতো আল-আকসায় সমবেত হলে ইসরায়েলি পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। ফিলিস্তিনি তরুণেরা পাথর ছুড়ে এর প্রতিবাদ করে। ৭ মে শুক্রবার এবং ১০ মে ইসরায়েলিদের জেরুজালেম দিবস পালনের দিন ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার সংঘর্ষে কয়েকশ ফিলিস্তিনি আহত হন।
নতুন করে উত্তেজনার ফলে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি দখলদারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের ভিটেমাটি ফিরে পাওয়ার মামলার শুনানি পিছিয়ে গেছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যুর পর পশ্চিম তীরজুড়ে বিক্ষোভ সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে।