আসামির বয়স জটিলতায় থমকে আছে বিচার
পাঁচ বছর আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদসরা। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছিল। তিন বছর আগে মামলাটির বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। প্রায় দুই বছর ধরে দুই আসামির বয়সের জটিলতা এবং বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, দ্রুত এই আলোচিত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বর্তমানে এই আলোচিত মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সবশেষ ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর দুই আসামির বয়সের জটিলতার কারণে মামলাটির আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, আলোচিত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের একপর্যায়ে আসামি জাহিদ হাসান ওরফে রানার আইনজীবী দাবি করেন, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। এর সপক্ষে তাঁরা জাহিদ হাসানের জন্ম সনদ ও পরীক্ষার সনদ জমা দেন। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাহিদ হাসান ওরফে রানাকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক চার্জশিট দিতে বলেন। গত বছর পুলিশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সম্পূরক চার্জশিট জমা দিলে ওই আসামির মামলা শিশু আদালতে পাঠানোর আদেশ হয়।
এরপর মাসুদ রানা নামে কারাগারে থাকা আরেক আসামির আইনজীবী তাঁর আসামিকেও অপ্রাপ্ত ঘোষণা করে শিশু আদালতে বিচারের আবেদন করেন। এর সপক্ষে তাঁরা জন্ম সনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দেন। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রানাকেও শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক চার্জশিট দিতে বলেন। ওই আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের পর তার বিচার শিশু আদালতে স্থানান্তরের আদেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘মামলার দুই আসামির বয়স জটিলতা থাকায় মামলাটির দীর্ঘদিন সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালতের নির্দেশে দুই আসামির বয়সের জটিলতার সমাধান হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের কারণেও মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ কিছু দিন বন্ধ ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুলের কারণে মামলাটির বিচার কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, আগামী ধার্য তারিখে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘মামলার দুই আসামি জাহিদ হাসান ওরফে রানা ও মাসুদ রানা নাবালক হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাদের সাবালকের সঙ্গে চার্জশিট দেয়। আমরা তাদের জন্ম সনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দিই। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুই আসামিকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে বলেন। পুলিশ আদালতের নির্দেশে সম্পূরক চার্জশিট দেয়। এখন তাদের দুজনের বিচার শিশু আদালতে হবে।’
ফারুক আহম্মেদ আরো বলেন, ‘নাবালকের বিচারের জন্য দোষীপত্র দিতে হয়। কিন্তু পুলিশ সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে। এতে এখনো আইনগত জটিলতা রয়ে গেছে। আমরা সামনের ধার্য তারিখে এ বিষয় আদালতে একটি আবেদন দেব।’
‘মূলত তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুলের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে রয়েছে। আশা করছি, আমার আসামিরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে,’ যোগ করেন ফারুক আহম্মেদ।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জেএমবির সদস্যরা হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনায় চকবাজার থানার উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করেন।
২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শফিউদ্দিন ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিট বলা হয়, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্যই সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই হামলা চালায়। এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ১০ আসামি জেএমবির সদস্য।
২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জন জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। একই সঙ্গে, মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন আদালত। এরপর অষ্টম অতিরিক্ত থেকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য বদলি করা হয়।
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১০ আসামি হলো মাসুদ রানা ওরফে সুমন (কারাগারে), কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আসিফ (কারাগারে), আবু সাঈদ ওরফে সালমান (কারাগারে), আরমান ওরফে মনির (কারাগারে), রুবেল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে সজীব (কারাগারে), জাহিদ হাসান ওরফে রানা (কারাগারে), চান মিয়া, ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ ওরফে মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়া।
আসামিদের মধ্যে জাহিদ, আরমান, রুবেল ও কবির ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই হামলায় আরো তিনজনের নাম পাওয়া গেলেও তারা বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। ওই তিনজন হলেন হিরন ওরফে কামাল, আলবানি ওরফে হোজ্জা ও আবদুল্লাহ ওরফে আলাউদ্দিন।