ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

Looks like you've blocked notifications!
পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে সদর উপজেলার মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন। ছবি : এনটিভি

পঞ্চগড়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের নাম না থাকলেও আটোয়ারী থানার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে পাঁচ নম্বর আসামি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায় পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, মামলার বাদী তার করা এজাহারে আমার নাম না আনলেও পুলিশ হয়রানি করার উদ্দেশে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে এফআইআরে আমার নাম উল্লেখ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি গজেন চন্দ্র বর্মণের ছেলে সুজন বর্মণ আমার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাদের প্রতিবেশী যুবক পলাশ চন্দ্র বর্মণ তার কলেজ পড়ুয়া ছোট বোনকে হাত ধরে টানাটানি করে বাড়ি থেকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তার হাত থেকে ছোট বোনকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলে পলাশ চন্দ্র বর্মণ তার বোনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। অভিযোগ পাওয়ার পর আমি বাদী ও বিবাদী পক্ষকে ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বসার জন্য নোটিশ করি। বিকেলে অভিযোগকারী সুজন চন্দ্র বর্মণ মুঠো ফোনে জানান, তারা বৈঠকে আসবেন না। পরবর্তী সময়ে নিয়ম অনুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি রাতেই জানতে পারি অভিযোগকারী সুজনের বাবা গজেন চন্দ্র বর্মণ আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তবে কেন আত্মহত্যা করেছেন তা জানি না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া অভিযোগ আর ৪  জুন সুজন চন্দ্রের করা মামলার অভিযোগ দুটি ভিন্ন। গজেন চন্দ্র বর্মণ আত্মহত্যা করার পর তার ছেলে ৪ জুন বাবাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে দুটি পৃথক মামলা করেন। ধর্ষণের বিষয়টি আগে জানলে সালিশের আহ্বান করতাম না। তা ছাড়া গজেন চন্দ্র বিষয়টি পারিবারিকভাবেই নিষ্পত্তি করে দিতে বারবার মৌখিকভাবে আবেদন করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুজন চন্দ্র বর্মণ বাদী হয়ে আটোয়ারী থানায় তাঁর বাবাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও পঞ্চগড় সদর থানায় তার বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা করেন। আটোয়ারী থানায় করা মামলার এজাহারে আমার নাম না আনলেও পুলিশ ওই মামলায় হয়রানি করার জন্য এফআইআরে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি আমাকে জানানো হলে আমি কখনই ওই বিষয়ে সালিশ আহ্বানের নোটিশ করতাম না। আমার কাছে তাদের অভিযোগ দাখিলের পর ওই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র গাফিলতি বা অসহযোগিতা ছিল না।

জ্যোতিষ চন্দ্র রায় আরও বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতেও গিয়েছিলাম। কোন কুচক্রীমহল শোকাহত পরিবারটিকে ইন্ধন দিয়ে এ ধরনের মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়ানোয় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে এলাকার স্কুলশিক্ষক জয়দেব চন্দ্র রায়, ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ, মো. সামাদ, সমাজসেবক ভুবেন চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।  

আটোয়ারী থানা পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) করা মামলার অপর আসামিরা হলেন, ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মণ (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৪৬), একই এলাকার মৃত ধনবর বর্মণের ছেলে ভবেন বর্মণ (৫০) এবং অলকান্ত বর্মণের ছেলে কাজল বর্মণ (২৩)।

মামলার বাদী সুজন চন্দ্র জানান, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে তার বোনকে অভিযুক্ত পলাশ চন্দ্র বর্মণ জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এতে সহযোগিতা করেন অপর আসামি কাজল। পরে ভুক্তভোগীর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে পলাশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে পালিয়ে যান। এতে আহত হয়ে তার বোন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় গত ২৪ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে চেয়ারম্যান তাদের নোটিশের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারি ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। সেখানে অভিযোগ দেওয়ায় পলাশের বাবা শ্যামল এবং আসামি ভবেন তাঁর বাবাকে তাচ্ছিল্য করেন এবং বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন। এরপর তাঁর বাবা বাড়িতে এসে কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে রাতে সবার অগোচরে আত্মহত্যা করেন। বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় তাঁর বাবা আত্মহত্যা করেছেন। যেহেতু আটোয়ারী থানা এলাকা তাঁর বাবার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল, এজন্য আটোয়ারী থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। আর সদর থানায় বোনের ধর্ষণের বিষয়ে মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়্যারম্যান জ্যোতিশ চন্দ্র রায় বলেন, ২৪ জানুয়ারি আমাদের কাছে দেওয়া অভিযোগ আর ৪ জুন একই ব্যক্তির দায়ের করা মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ আলাদা। আমাকে দেওয়া অভিযোগে ধর্ষণের কোনো কথা ছিল না। হাত ধরে টানাটানির মাধ্যমে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি থাকলে আমি বৈঠকে সুরাহার কথা না বলে থানায় খবর দিতাম। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকেই আমি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এজন্য দুই মামলায় আমাকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু পুলিশ কোনো তদন্ত না করেই বাদীর অভিযোগ দাখিলের একই দিন এফআইআর মামলায় আমাকে আসামি হিসেবে জড়িয়েছে।

শগতকাল নিবার সন্ধ্যায় পৃথক দুই মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা এবং সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া।

আটোয়ারী থানার ওসি বলেন, ‘আসলে অভিযোগপত্রে সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে।’

অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে জোতিষ চন্দ্র রায়কে উল্লেখ না করলেও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) কেন আসামি করা হয়েছে—এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতেই আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে আসামির তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যানের নাম না থাকলেও এজাহারের গর্ভাংশে তার নাম রয়েছে। এজন্য এফআইআরে ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।