ইভ্যালির লকার খুলে যা পেল পরিচালনা পর্ষদ

Looks like you've blocked notifications!
পরিচালনা পর্ষদের সংবাদ সম্মেলনে কথা বরছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কার্যালয়ে থাকা দুটি লকার আজ সোমবার বিকেলে ভাঙা হয়। কিন্তু ভাঙার পর ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানটির লকারে যা পাওয়া যায়, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইভ্যালির দুটি লকার ভেঙে মাত্র আড়াই হাজার টাকা, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই ও ফাইলপত্র পাওয়া যায়।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্ব পায় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। এই পর্ষদের সদস্যরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডির ১৪ নম্বর সড়কের বাড়ির তিনতলায় ইভ্যালির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

কার্যালয়ে থাকা ইভ্যালির প্রথম লকারটি ভাঙা শুরু হয় সোয়া ৩টার দিকে। লকারটি থেকে বের করা হয় মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৯৭টি ও সিটি ব্যাংকের ১০টি চেকবই। এ ছাড়া ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কিছু পারিবারিক কাগজপত্র পাওয়া যায়। প্রথম লকারটি নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দামি কিছু নেই, সব ফালতু।’

ভবনটির নিচতলায় ইভ্যালির আরেকটি কক্ষ আছে। এরপর সেখানে যায় দলটি। ঘরটির ভেতরে অসংখ্য কাগজ, খাম, ভিজিটিং কার্ড, ম্যাগাজিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে থাকা আরেকটি লকার খোলা শুরু হয় বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে। সাড়ে ৪টার দিকে লকারটি খোলা হয়। দ্বিতীয় লকারটি খুলে দুই হাজার ৫৩০ টাকা, ইস্যু করা কিছু চেক, ফাইলপত্র, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অসংখ্য ব্যাংকের চেকবই পাওয়া যায়।

ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, পর্ষদের সদস্যরা কয়েকবার কারাগারে গিয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা রাসেলের কাছে লকারগুলোর কম্বিনেশন জানতে চান। তবে তাঁরা সে কম্বিনেশন জানতে ব্যর্থ হন। এরপর পর্ষদ লকার ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ লকার ভাঙার সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসিয়া সিরাত উপস্থিত ছিলেন।

লকার দুটি ভেঙে নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, সাউথইস্ট ও সিটি ব্যাংকে ইভ্যালির দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এ টাকা উত্তোলনের অনুমতি মিলেছে। ইভ্যালি কার্যালয় ও গোডাউনে ১৫ নিরাপত্তাকর্মীসহ ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের তিন গোডাউনে নিরাপত্তার জন্য ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ইভ্যালির সার্ভারটি বন্ধ হয়ে আছে। সার্ভারটি চালায় আমাজন ডটকম। তারা ছয় কোটি টাকা পাবে। এ টাকা পরিশোধ না করা হলে সার্ভার খুলবে না। সার্ভার ছাড়া কোনো গ্রাহক ইভ্যালির কাছে কত টাকা পায়, কার মালামাল কোনটা, কে মাল দিয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই সার্ভার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে ছয় কোটি টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাজনের সঙ্গে দর–কষাকষি চলছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ইভ্যালির সম্পদের সঙ্গে দেনার হিসাব মেলাতে হবে। গেটওয়েতে কত টাকা আছে, তা জানা নেই। তবে নগদ, বিকাশসহ পাঁচটি গেটওয়েতে ২৬ কোটি টাকা আছে। সেখান থেকে ক্রেতাদের কিছু পাওনা দেওয়া যেতে পারে, তবে হাইকোর্টের আদেশক্রমে। এটা হাতে আসার কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেওয়া যাবে। সাভারের গোডাউনগুলোতে ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মুঠোফোনসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্র আছে। আদালতের নির্দেশক্রমে এগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

ইভ্যালি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এর জবাব দেওয়া কঠিন। ব্যাংকে যত টাকা পেয়েছি, তাতে টাকা পাচারের বিষয়টি আন্দাজ পেয়েছি। ধারণা করছি, টাকা পাচার হয়ে থাকতে পারে। অডিট হলে তখন বিষয়টি জানা যাবে।’