ইসলাম গ্রহণ করে জার্মানি থেকে বাংলাদেশে নববধূ

Looks like you've blocked notifications!
বরিশালে জার্মানি থেকে আসা নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্বজনেরা। ছবি : এনটিভি

প্রেমের টানে সুদূর জার্মানি থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন অ্যালিসা বেগম নামের এক তরুণী। এর আগে তাঁর নাম ছিল অ্যালিসা থিওডোরা পিত্তা। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অ্যালিসা বেগম হয়ে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাকিব হোসেন শুভকে বিয়ে করেন।

গত শুক্রবার বিকেলে নববধূকে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শুভ। এরপর গতকাল শনিবার সকালে হেলিকপ্টারে করে বরিশাল যান তিনি। বিদেশি বধূ নিয়ে আসার খবর পেয়ে দলবেঁধে তাঁদের দেখতে যান গ্রামবাসী। পরে নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শুভর স্বজনেরা।

জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জার্মানির তরুণী অ্যালিসাকে বিয়ে করেন শুভ। তবে, সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি। এজন্য বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। সেখানে বউভাত ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন তাঁরা।

শুভ বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে। রেলওয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে ২০১১ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমান তিনি। পরে সেখানে সিটি রেলওয়ে সার্ভিসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ নেন। একপর্যায়ে স্থানীয় বেইলি ফিল্ড ডায়ালন্ড্রোভ এলাকার বাসিন্দা অ্যালিসা থিওডোরা পিত্তার সঙ্গে পরিচয় হয়। অ্যালিসা পেশায় একজন সেবিকা। তাঁর মা-বাবাও সেখানে চাকরি করেন।

শুভ বলেন, ‘গত বছরের ৫ মার্চ অ্যালিসা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অ্যালিসা বেগম হিসেবে আমার সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। শনিবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই শুক্রবার জার্মানি থেকে রওনা হয়ে বাংলাদেশি আসি। শ‌নিবার সকালে বরিশাল বিমানবন্দরে আসি। এরপর হেলিকপ্টারে করে অ্যালিসাকে নিয়ে বাড়ি আসি। অ্যালিসার সঙ্গে এসেছেন তাঁর বান্ধবী লেইসা।’

শুভ আরও বলেন, ‘জার্মানিতে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রায়ই অ্যালিসার সঙ্গে দেখা ও কথা হতো। এভাবে কিছুদিন চলার পর আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্ক চলে অনেকদিন। দুজনই বুঝতাম, আমাদের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু, প্রস্তাব কে আগে দেবে, এটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। বিষয়টি মাথায় রেখে দুজন-দুজনকে আরও বোঝার চেষ্টা করলাম। যখন বুঝলাম, অ্যালিসা আমাকে মনেপ্রাণে চায়, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রস্তাব দেওয়ার।’

‘একদিন অ্যালিসার মনের অবস্থা বুঝে ভালোবাসার কথাটা জানালাম। উত্তর আসার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, অ্যালিসাও অপেক্ষায় ছিল প্রস্তাবের। ভালোবাসা হয়ে যাওয়ার পর আর সেভাবে ভালোবাসার কথা বলা হয়নি। কিন্তু, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিষয়টি আমার পরিবারকে জানাই। তাঁদের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর অ্যালিসাকে তাঁর পরিবারকে রাজি করাতে বলি। অ্যালিসার পরিবারও আমাদের ভালোবাসায় সম্মতি দেয়। বিয়ের আগে অ্যালিসাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলি। এতে রাজি হয়ে যায় সে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দুই পরিবারের সম্মতিতে আমরা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই’, যোগ করেন শুভ।

রাকিব হোসেন শুভ বলেন, ‘বাংলাদেশে আসতে গেলে আমাদের দুজনকেই ছুটি নিতে হবে। এজন্য আমরা আগেভাগে বিবাহবার্ষিকীর দিনটা ঠিক করে রাখি—ওই দিন দেশে যাব। সেভাবে ছুটি নিয়ে জার্মানি থেকে স্ত্রীসহ চলে আসি বরিশালে। দেশের মাটিতে পা রাখার পর কতটা যে ভালো লেগেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।’

শুভ আরও বলেন, ‘আমরা বিয়ে করেছি বিদেশে। সেখানে আমাদের সমাজের যে রীতিনীতি ও উৎসব, তা পালন করতে পারিনি। আমাদের দেশের বিয়েতে যতটা উৎসব হয়, তাও হয়নি। আমি চাই, নতুনভাবে বিয়ের উৎসব করতে। অ্যালিসাও আমাদের দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সেও চাচ্ছে, এ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ের উৎসব হোক। আমার ও অ্যালিসার আবদারে আমার মা-বাবা ও স্বজনেরা নতুনভাবে বিয়ের উৎসবের আয়োজন করেছেন। আগামী ৯ মার্চ হবে আমাদের গায়েহলুদ। ১০ মার্চ গ্রামবাসীর জন্য বউভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’

শুভর বাবা চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে বিদেশে বিয়ে করেছে। সেখানেই থেকেছে এতদিন। অনেকদিন পর পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফিরেছে। গ্রামবাসী ও আত্মীয়-স্বজনকে ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারিনি। এজন্য গায়েহলুদ ও বউভাতের আয়োজন করেছি। তাদের বিয়েতে আমি অনেক খুশি।’