ইসির সংলাপে আমন্ত্রিত ৩০ শিক্ষাবিদের ১৭ জনই অনুপস্থিত

Looks like you've blocked notifications!
নির্বাচন কমিশন ভবন। ছবি : সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে শুরু হয়েছে সংলাপ। আজ রোববার বিকেল ৩টায় শুরু হয়েছে এ সংলাপ। নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে চলমান সংলাপে আমন্ত্রিত ৩০ জন শিক্ষাবিদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন মাত্র ১৩ জন।

‘বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নিয়ে ইসি পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করতে চায়’ উল্লেখ করে ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে সংলাপ চলছে। এতে ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত আছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য দেশের বরেণ্য ৩০জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন—ড. জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসাইন, ওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, সাদেকা হালিম, ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ড. আখতার হোসেন, লায়লুফার ইয়াসমিন, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. নিয়াজ আহম্মেদ খান।

গতকাল শনিবার ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মোট ৩০ জন শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ আসবেন না। তবে অনেকেই আসবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। কারও কারও আবার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছানো হলেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।’

আজ এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর পরও যাঁরা আসেননি, তাঁরা হলেন—প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জামান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউ ল্যাব) এর অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মো. ফেরদৌস হাসান, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামছুল আলম এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ড. তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

গত বুধবার অর্থাৎ ৯ মার্চ নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন—শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারীনেত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে ইসি। তাদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করার পরিকল্পনা ইসির।

ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২২ মার্চ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এবং ৩০ মার্চ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বসতে পারে ইসি। অন্য মহলের সঙ্গে কবে নাগাদ বসবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নিয়ে প্রথম অফিস করেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এককভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে না। আমাদের কনসার্ন যে এজেন্সিগুলো আছে, সবাই চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেটাকে আমরা বলি পলিটিক্যাল লিডারশিপ অব দ্য কান্ট্রি, এর মানে আওয়ামী লীগ একা নয়। দেশে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি মিলে একটি পলিটিক্যাল লিডারশিপ থাকে। এ লিডারশিপে কিন্তু একটা সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলব না, আমরা মাঠেই কথা বলব—তাহলে কিন্তু সমস্যা।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বলে, আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমে আসে। আমরা যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি, তাহলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহঙ্কার পরিত্যাগ করে মিলেমিশে আলোচনা করতে হবে যে, নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ভূমিকা কী হবে, আমরা কতটা সংযত থাকব, আমরা কতটা সহযোগিতামূলক আচরণ করব।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশে পলিটিক্যাল লিডারশিপের যে দায়িত্বটা রয়েছে, তাঁরা যদি একে-অপরের সঙ্গে শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের এককভাবে যে উদ্দেশ্য অর্জন, সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, সে পলিটিক্যাল লিডারশিপের কাছে আবদার করা, অনুনয় করা, বিনয় করা এবং যাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের সঙ্গেও আমরা বসব।’

নির্বাচন কমিশন সবশেষ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ২০১৭ সালে। সে বছর ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে কার্যত ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসেছিল কে এম নূরুল হুদার কমিশন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে কমিশন।