ই-অরেঞ্জ নিয়ে প্রতিবেদন দায়সারা : হাইকোর্ট, ফের দাখিলের নির্দেশ
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা, অর্থ লোপাট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। প্রতিবেদনটি দায়সারা। এ কারণে আদালত এক মাসের মধ্যে আবারও প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। বিএফআইইউ'র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ।
এর আগে বুধবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও ভাই শেখ সোহেল রানার অস্বাভাবিক লেনদেন ও অর্থ লোপাট নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ই-অরেঞ্জ.শপ ও অরেঞ্জ বাংলাদেশ এর মালিকানায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করে পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার (সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই) স্ত্রী নাজনীন নাহার বীথির নামে হস্তান্তর করা হয়।
সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন পরিচালনা করা হয়েছে। ১৩টি হিসাবের মাধ্যমে জানু ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ১১১.৪৫ কোটি টাকা জমা ও ১ হাজার ১০৯.৯৭ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ২২১.৪২ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। হিসাবগুলোতে জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সময়ে অধিকাংশ লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া দেখা গেছে সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মো. মাসুকুর রহমানের নামে সর্বমোট ২৪টি হিসাব পরিচালনা করে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই ২৪টি হিসাবের মাধ্যমে সময়ে সময়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন করেছেন। হিসাব খোলার ফরমের তথ্য অনুযায়ী ই-অরেঞ্জ.শপ ও অরেঞ্জ বাংলাদেশ এর ব্যাংক হিসাবের নমিনি ও হিসাব খোলার আবেদনে হিসাবটির পরিচয়দানকারী ছিলেন মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ।
একইভাবে, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল এর হিসাব খোলার আবেদন ফরমে পরিচয়দানকারী ছিলেন সোনিয়া মেহজাবিন। আলোচ্য সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠান তিনটির ব্যবসায়িক ঠিকানা একই ভাবে ব্যাংক হিসাবের দলিলগুলোতে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান তিনটির ব্যাংক হিসাবে নিয়মিতভাবে ফান্ড ট্রান্সফার, আরটিজিএস এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে বলে লেনদেন বিশ্লেষণে পরিলক্ষিত হয়েছে।
ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের অংশে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ.শপ ও অরেঞ্জ বাংলাদেশ এর হিসাবে সম্পন্ন হওয়া লেনদেন পর্যালোচনায় পেমেন্ট গেটওয়ে (এসএসএল কমার্স) কর্তৃক মোট ৩ লাখ ৪ হাজার ৫২৫টি অর্ডার আইডির বিপরীতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জ শপকে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ৬৬১টি অর্ডার আইডির মোট ৬৫.৯৯ লাখ টাকা গ্রাহককে রিফান্ড করা হয়েছে বলে দেখা গেছে।