ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৬, আহত ৮৪৪ : যাত্রী কল্যাণ সমিতি
বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৭২টি দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত এবং ৮৪৪ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যেরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে দাবি করছে সংগঠনটি।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতার কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রায় শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত, অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত এবং ৮৪৪ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, নিহত ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আহত ২৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত এবং ১১০ জন আহত হয়েছে, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২০৯ জন চালক, ২৪ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৮৮ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৩৫ শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, দুজন সাংবাদিক, আট জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন শিক্ষক, ছয় জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একজন জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২৫ জন চালক, ৬০ জন পথচারী, ৩৫ জন নারী, ২৫ শিশু, ২৫ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহণ শ্রমিক, পাঁচ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুজন ডিজিএফআই সদস্য, দুজন নৌবাহিনীর সদস্য, দুজন শিক্ষক, একজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনাবাহিনীর সদস্য ও একজন চিকিৎসক রয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, এসব দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত মোট যানবাহনের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ অটোরিকশা, ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল এবং ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ বাস রয়েছে।
এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ২০ দশমিক ৯৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪২ দশমিক ৪৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ অজ্ঞাত কারণ, ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়া সারা দেশে মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট দুর্ঘটনাকেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হকসহ সংগঠনটির নেতারা।