ঈদে এক দিনের ছুটি বাড়ানোর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
আসন্ন ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য কমানোর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে একদিনের সরকারি ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আজ রোববার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী বছর হওয়ায় এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে। এতে আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহণে বাড়তি প্রায় ৯০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১৬ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ১৮ এপ্রিল বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। কিন্তু আমাদের গণপরিবহণে সড়কপথে ৬ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় এই ৫১ লাখ যাত্রীর একটি বড় অংশ আটকে যাচ্ছে। এই কারণে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে। অন্যথায়, ২১ এপ্রিল সড়ক-রেল-নৌপথের পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে।
এ জন্য ২০ এপ্রিল একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি যাত্রাপথে বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। কিন্তু যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহণে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় ভয়াবহ নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, দেশে সড়ক পথে গণপরিবহণের ভয়াবহ সংকট চলছে। এহেন পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে রাজধানীর ৫ থেকে ৬ লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বহুলাংশে বেড়ে যাবে। এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীতে তীব্র যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সকল পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং যুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলো বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, বাবুবাজার ব্রিজ, গাবতলী মাজার রোড থেকে টঙ্গী রেলস্টেশন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা, কাঞ্চন ব্রিজ, মীরের বৌর, আশুলিয়া, ইপিজেড, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, জিঞ্জিরা, কেরাণীগঞ্জ, হাতিরঝিল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, রামপুরা, আমুলিয়া, ডেমরা-স্টাফ কোয়ার্টার, সুলতানা কামাল ব্রিজ, চিটাগাং রোড, মেঘনা টোল, গৌরীপুর বাস টার্মিনাল, আরিচা ঘাট, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা, হাটিকুমরুল, বনপাড়ার মোড়, ভুলতা, গাউছিয়া, বরপা অন্যদিকে বিআরটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াতে মানুষজনকে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হবে। এসব যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব। তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। ফলে এই দুর্ভোগ নিয়ে ঈদযাত্রায় বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সদস্যদের ১৫ রমজানের পর থেকে আগে-বাগে বাড়ি পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।