একজন সৃজনশীল মানুষের বিদায়
আমাদের প্রিয় সহকর্মী, ভাই, বন্ধু, ডিইউজের সাবেক সভাপতি, এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক নেতা আবদুস শহিদ মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর মেহমান হয়ে এই অস্থায়ী ঠিকানা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাসখানেক ধরে আবদুস শহিদ মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আবদুস শহিদ বেশ কিছুদিন আগে লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে নিজেদের জায়গায় একটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ শেষ করে তিনি খুব প্রশান্তি অনুভব করেছিলেন। আমাকে তিনি বলেছিলেন, ‘আবদাল ভাই আমার খুব ভালো লাগছে কাজটি শেষ করতে পেরেছি।’ তাঁর এই কাজের প্রশংসা করে বলেছিলাম, আখিরাতের জন্য আপনি সঞ্চয় করে কিছু নিয়ে গেলেন।
আবদুস শহিদ ছিলেন পেশাগতভাবে একজন দক্ষ ও সৃজনশীল সাংবাদিক। অভিজ্ঞ সংগঠক। সাংবাদিকদের পেশাগত মান উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে সব সাংবাদিকের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ক্ষুদ্র মানসিকতার ঊর্ধ্বে। যে সময়ে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন, তখন তাঁর যুগান্তকারী ও সাহসী পদক্ষেপের কথা সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নেও তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন।
শহিদ ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটি শোনার পর থেকে আমার মনে মসজিদ নির্মাণের তাঁর সদকায় জারিয়ার কাজটির কথাই বারবার মনে পড়ছে। মহান আল্লাহ তাঁর কাজ ও তাঁকে কবুল করুন। তাঁর গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিয়ে দয়াময় মেহেরবান তাঁকে জান্নাত দান করুন।
কাবা শরিফের খতিব ড. শায়খ আবদুর রহমান ইবনে আবদুল আজিজ আস সুদাইসির এক জুমার খুতবা ‘উত্তম পরিসমাপ্তি’ পড়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে, এ পৃথিবীতে মৃত্যু হচ্ছে প্রত্যেক বস্তুর ভাগ্য এবং সব প্রাণীর সমাপ্তি; প্রত্যেকে মৃত্যুর দরজায় আশ্রয় নেবে এবং প্রত্যেক প্রাণ তার পেয়ালার অনুভূতি লাভ করবে। এটি হচ্ছে চতুর্দিকে ঘোরার পরিণতি এবং পৃথিবীর বুকে ঘোরার শেষ। মৃত্যু আমাদের দেয়ালের মতো ঘিরে আছে।’
পবিত্র কোরআনে উত্তম পরিসমাপ্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষ যখন জানে না, কখন তার নির্দিষ্ট সময় হঠাৎ উপস্থিত হবে এবং কখন মৃত্যু অপ্রত্যাশিতভাবে আসবে, তখন তার উচিত সৎকাজ দ্বারা এ অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকা। উত্তম পরিসমাপ্তির অন্যতম উপায় হলো বিশ্বাসের স্পষ্টতা, তৌহিদ ও ঈমানের নিরাপত্তা, সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ, নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ (রীতিমতো আদায় করা), সৎকাজ করার পদক্ষেপ নেওয়া, পবিত্র কোরআন নিয়মিত পাঠ, আল্লাহকে স্মরণ বা তাঁর জিকির, বেশি বেশি গুনাহ মাফ চাওয়া, তওবায় লেগে থাকা, অর্থাৎ বারবার তওবা করা এবং উত্তম পরিসমাপ্তির দোয়া দ্বারা আল্লাহর ওপর জোর দেওয়া।
লেখক
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক।