একটি মৃত্যুও কাম্য নয় : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আজ রোববার সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে দেশে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়।

আজ রোববার গণভবনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনটি বিভিন্ন টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা তুলে ধরেন এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নেওয়া পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়। চীনে করোনা ছড়ানোর পরপরই বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী দেশে এযাবৎ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৭০ বছরের ওপরে। এবং তাঁরা অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তবে একটি মৃত্যুও কাম্য নয়।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশে টানা ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ সময়ে জনসাধারণকে ঘরে থাকারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ঘরে থেকেই পবিত্র শবেবরাত ও পয়লা বৈশাখ উদযাপনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

‘আমি চাই না, ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে সংক্রমিত হোন’

গণভবনে আজকের সংবাদ সম্মেলন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করা হচ্ছে এবং সেখানে সাংবাদিকদের সরাসরি উপস্থিতি না থাকার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা সংবাদ সম্মেলন করলে সাংবাদিকদের ডাকি, কথা বলি, মতবিনিময় করি। কিন্তু আজকে একটু ব্যতিক্রমধর্মীভাবে সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা নিয়েছি এ কারণে যে আমি চাই না, আপনারা বাইরে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে সংক্রমিত হোন।’

‘এ কারণে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওর মাধ্যমে বার্তাটা পৌঁছে দিচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে যখন ভালো সময় আসবে, তখন আপনাদের গণভবনে দাওয়াত  দেব। তখন যেন মন ভরে আপনারা প্রশ্ন করতে পারবেন এবং উত্তর দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।  

সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় নতুন চারটিসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

পাঁচটি প্যাকেজে যা আছে :

প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেওয়া।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের সুদের অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প/ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান : ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো : ব্লক টু ব্লক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার LIBOR + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃতপক্ষে ২.৭৩%) হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।

প্যাকেজ-৪ : প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম (Pre-shipment Credit Refinance Scheme) নামে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্যাকেজ-৫ : এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ ভাতা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।