এক পায়ে লাফিয়ে এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায় সুমাইয়া
এক পায়ে লাফিয়ে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে সুমাইয়া। তবু লেখাপড়া ছাড়ে না সে। ১০ বছর বয়সী মেয়েটির অদম্য ইচ্ছে দেখে প্রশংসা করেন অনেকে। বাবা-মাও গর্ববোধ করেন। কিন্তু, রিকশাচালক বাবার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। মেয়ের ও সংসারের জন্য দুটো পয়সা বাড়তি আয়ের জন্য সুমাইয়াকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ফুরসৎ মেলে না তাঁর।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া। সুমাইয়ার বয়স যখন দুই বছর, তখন রাস্তায় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় তার বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়।
বর্তমানে সে উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। প্রতিদিন পিঠে ব্যাগ নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। বাসায় ফিরে আসে লাফিয়ে।
সুমাইয়া বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। কথা হলে সে বলে, ‘আমার অনেক কষ্ট হয়। তারপরও আমি পড়ালেখা করে ডাক্তার হতে চায়।
চিকিৎসক হতে চাওয়ার কারণ হিসেবে সুমাইয়া বলে, ‘যাতে করে আমার মতো কেউ চিকিৎসার অভাবে এমন কষ্ট না পায়।’
সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৮ বছর ধরে চিকিৎসা করছি, কোনো ফল পাইনি। হাড়ের চিকিৎসকরা বলেছেন, পা ভালো করতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। আমি গরিব, এত টাকা কোথায় পাব।’
সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, ‘মেয়ের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাচল ও স্কুলে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারি না। দুচোখে পানি চলে আসে। গরিবের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কী করার আছে? তারপরও স্বপ্ন দেখি, আমার মেয়ে একদিন সুস্থ হয়ে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে।’
উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ বলেন, ‘সুমাইয়া পড়ালেখায় খুবই ভালো। একদিনও স্কুল ফাঁকি দেয় না, কষ্ট করে স্কুলে আসে। আমরা চাই সে মানুষের মতো মানুষ হোক।’