এনআইডি জালিয়াতি করে ব্যাংকঋণ আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার পাঁচ
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট নকল করে ফ্ল্যাট ক্রেতা সেজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে মতিঝিল গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন, আল আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুৎ, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য মতে এদের গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন হাফিজ আক্তার।
শুধু তা-ই নয়, হাফিজ আক্তারের দাবি, জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করতেন নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন নিম্নপদের কর্মকর্তা। তদন্ত শেষে জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৪ জনকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব তথ্য ইসি ডিবিকে জানিয়েছে। এ চক্রের সদস্যেরা মোট ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার করেছেন, এমন তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘ভুয়া এনআইডি, টিনসহ অন্যান্য তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় মামলা করা হয়। এ মামলা তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।’
‘তদন্তে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, প্রতারক চক্রটি ভুয়া এনআইডি, ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডসহ অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে বিপ্লব নামের একজনকে ডিবি প্রথমে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুসন্ধান করে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে’, যোগ করেন হাফিজ আক্তার।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর বিপ্লব ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যে ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের মূলহোতা আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে। আল আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন লোকদের সন্ধান পাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যুতকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদ্যুৎ ও আল আমিন তাদের অন্যান্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী কখনও ক্রেতা, আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক, কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজায়। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করে। রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে।’
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ‘চক্রটি কৌশলে কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে থেকে ফ্ল্যাট কিনবে বলে তাঁর এনআইডি ও অন্যান্য কাগজ নিয়ে নেয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এনআইডির সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে ব্যাংক যখন এনআইডি সার্ভারে যাচাই করতে যায়, তখন সব তথ্য সঠিক পায়। সার্ভারের এসব তথ্য দেখে আশ্বস্ত হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং তারা লোন অনুমোদন করে। তারপর সেই টাকা পরিশোধ না করে আত্মস্মাৎ করে।’