এবার নিজ বাসায় টিকা নিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

Looks like you've blocked notifications!
এবার নিজ বাসায় বসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর মাধ্যমে করোনার টিকা নিয়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না। ছবি : এনটিভি

এবার নিজ বাসায় বসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর মাধ্যমে করোনার টিকা নিয়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না। তাঁর টিকা নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

‘জরুরি কারণে’ না বুঝে এভাবে টিকা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাঁসদাক জানান, যে কর্মচারী উপজেলা চেয়ারম্যানকে টিকা দিয়েছেন, তাঁর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তাঁর টিকা প্রয়োগ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার ওই কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তানোর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত সরকারি বাসভবনের নিচতলায় বসে করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না। রাজশাহীতে যখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক মানুষ টিকা পাননি, তখন সরকারি বাসভবনে বসে করোনার টিকা নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিশান মন্ডল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় গিয়ে টিকা প্রয়োগ করেন। টিকা প্রদানের প্রশিক্ষণ নেই তাঁর। তাঁর কাজও এটি নয়। স্টোর থেকে কেন্দ্রে টিকা নিয়ে যাওয়া নিশানের কাজ। তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আর নিশানও যুবলীগ করেন।

মঙ্গলবার রাতে জামিল রহমান নামের এক যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাসায় বসে উপজেলা চেয়ারম্যানের টিকা গ্রহণের ছবি দিলে তা ভাইরাল হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী না হওয়া সত্ত্বেও টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে নিশান মন্ডল বলেন, তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে টিকাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি টিকা দিয়েছেন। তাছাড়া গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে তাঁর এক মাসের প্রশিক্ষণও রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, তিনি প্রথম ডোজ টিকা হাসপাতালে গিয়েই নিয়েছেন। জরুরিভাবে তাঁর ঢাকায় যাওয়া দরকার। হাসপাতালে গেলে বেশি সময় লাগবে। তাই তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। তারপর তিনি বাসায় স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

তবে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাঁসদাক বলেন, নিশান মন্ডল একজন পোর্টার। তিনি কোনোভাবেই কারও শরীরে টিকা প্রয়োগ করতে পারেন না। তাঁর কোনো প্রশিক্ষণও নেই। তাঁর টিকা প্রয়োগ করা ঠিক হয়নি। এক অর্থে এভাবে টিকা দেওয়াটা অনিয়ম হয়েছে।

ডা. বার্নাবাস হাঁসদাক বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের জরুরি কাজ ছিল বলে তিনি এই সহযোগিতাটা করেছেন।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে হবে। আইনত তিনি কোনোভাবেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে তাঁর বাসায় গিয়ে টিকা দিতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করার এখতিয়ার আমাদের নেই, কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশ্ন করতে পারি। তাই আমরা জানতে চেয়েছি কেন তিনি এই কাজ করেছেন।

এর আগে চট্টগ্রামে নিজ ঘরে বসে টিকা নেন এক ব্যক্তি। সেই ছবি তিনি ফেসবুকে শেয়ারের পর তা ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এতে তিনজনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি টিকা আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে ব্যবহারের’ অভিযোগ আনা হয়। পরে বাসায় গিয়ে টিকা দেওয়ার ঘটনায় জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দে’কে চাকরিচ্যুত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি।