এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ : অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। এর আগে দুই দফায় অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য নয় দিন সময় নেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্রের ব্যাপারে সন্তোষ জানালে আজ মঙ্গলবার সকালে বিচারক মো. মোহিতুল হক আমলে নেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাশিদা সাইদা খানম জানান, অভিযোগপত্র না পাওয়ায় আদালতে নারাজির জন্য বাদীপক্ষ দুই দফা সময় নেয়। আজ পুলিশের অভিযোগে ঘটনার বিষয়ে পুরোপুরি বর্ণনা এসেছে এবং বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট বলে আদালতে জানালে বিচারক তা আমলে নেন।
এর আগে আজ সকালে কঠোর নিরাপত্তায় মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
গত বছরে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পরে ওই গৃহবধূর স্বামীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আটজনকে অভিযুক্ত করে গত ৩ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। পরে গত ৪ জানুয়ারিতে আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমানকে (২৮) প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫), মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), মো. রাজন ও আইন উদ্দিন।
আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাসুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়।
কোনো পদে না থাকলেও গ্রেপ্তার হওয়া সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা যায়। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড শেষে সবাই ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুদিনে গ্রেপ্তার আটজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে।
গত ৩০ নভেম্বর ধর্ষণের ঘটনার ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছায়। ডিএনএ প্রতিবেদনে ধর্ষণের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্করের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে, ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে।
তাছাড়া গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।
এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।