এরা সমাজবিরোধী, অমানুষ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বর্বরতার চরম সীমায় পৌঁছেছে তারা। আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ রকম মানুষ সমাজবিরোধী, এরা অমানুষ।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীতে একজন মায়ের ওপর যে বর্বরোচিত ও পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়ে সেটার ভিডিও করে প্রচার করেছে, এটা বর্বরতার চরম সীমা। অভিযুক্তদের দুইজন ছাড়া সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আশা করছি, আদালত এ অমানুষগুলোর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

নোয়াখালীর ঘটনা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখনই কোনো সংবাদ পাচ্ছে, দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদেরও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে আশা করছি। যেখানেই ঘটনা ঘটুক, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা বসে থাকিনি।’

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন দেলোয়ার বাহিনীর বাদলসহ অন্যরা। এর পর তারা গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। সেখানে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে দুটি মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই আসামিকে গতকাল ছয়দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হলেন একলাশপুর ইউপির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ (৪২), মামলার ১ নম্বর আসামি একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সিবাড়ির রহমত উল্যার ছেলে বাদল (২২), ২ নম্বর আসামি একলাশপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়াবাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. রহিম (২০), ৫ নম্বর আসামি পূর্ব একলাশপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াব আলী বেপারী বাড়ির সাজু (২১) এবং ৯ নম্বর আসামি একলাশপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সিবাড়ির মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।

এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মো. রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল সোমবার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (আমলী আদালত-৩) বিচারক মাশফিকুল হক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ ছাড়া ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মামলার ১ নম্বর আসামি বাদলকে গতকাল রাতে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র‍্যাব-১১-এর সদস্যরা। বাদল, সাজু ও সোহাগকে আজ আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পলাতক আসামিরা হলেন আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব ও আরিফ। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তাঁরা সবাই একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য। দেলোয়ারকে গত রোববার দিবাগত রাতে র‍্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করলেও বেগমগঞ্জ থানায় করা দুটি মামলায় তাঁর নাম নেই। দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।