এরিককে নিয়েই রাজনীতিতে ফিরতে চাই : বিদিশা

জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। এরশাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে ১৬ বছর পার হয়ে গেছে। গত বছর এরশাদের মৃত্যুর কিছুদিন পর ছেলে শাহতা জারাব এরিককে নিয়ে বারিধারার কূটনীতিকপাড়ার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’-এ বসবাস শুরু করেন বিদিশা। সাবেক রাষ্ট্রপতি এখানেই থাকতেন। এরশাদ নিজের নামে যে ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন তার থেকে অর্জিত আয়ে এরিকের খরচ নির্বাহ করা হয়। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে এরশাদ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে উইল করে যান।
এরশাদের মৃত্যুর কিছুদিন পর জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন বিদিশা সিদ্দিক। অংশ নিতে চান ঢাকার-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনেও। বিচ্ছেদের পরও এরশাদের বাসভবনে বসবাস ও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া, এরশাদের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। এ নিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’-এর বাসায় দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট মো. জাকের হোসেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব আজ সোমবার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
এনটিভি অনলাইন : কেমন আছেন?
বিদিশা সিদ্দিক : জি ভালো আছি। এ মুহূর্তে ছেলে (এরিক এরশাদ) ভালো আছে; তাই মা হিসেবে আমিও ভালো আছি।

এনটিভি অনলাইন : প্রেসিডেন্ট পার্কে কীভাবে এলেন?
বিদিশা সিদ্দিক : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত বছরের ১৪ জুলাই মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাকে লাশ পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। আমার ছেলে এরিক এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে গত বছরের ১৪ নভেম্বরে একদিন আমার ছেলে এরিক এরশাদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘মা আমার খুদা লেগেছে, আমার জন্য খাবার নিয়ে আস।’ আমি ফোন পেয়ে রান্না করে নিয়ে আসি। এরিক আমাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে। আমি দেখি তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তার ওজন কমে গেছে। পরে এরিক আমাকে জানাল, তাকে ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না। ১৫ দিন গোসল না করে আছে। এরিক যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক। সে মাকে নিয়ে থাকতে চায়। ছেলেকে ভালো রাখার জন্যই আমি প্রেসিডেন্ট পার্কে আছি।
এনটিভি অনলাইন : এরিকের দেখভালের জন্য গঠিত ট্রাস্ট্রের সম্পদ নিয়ে আপনাকে জড়িয়ে গুঞ্জন রয়েছে!
বিদিশা সিদ্দিক : গুঞ্জন তো গুঞ্জনই। আমার ছেলে এরিক এরশাদ একজন প্রতিবন্ধী। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর সে সম্পূর্ণ একা হয়ে যায়। তাকে দেখভাল করার কেউ ছিল না। ট্রাস্টের টাকা নিয়ে আমার কোনো লোভ নেই। আর ট্রাস্টের টাকা তো চাইলে কেউ ভাঙতে পারবে না। আল্লাহ মাফ করুন, এরিক যদি মারা যায় তাহলে তো ট্রাস্টের সম্পূর্ণ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যাবে।
এনটিভি অনলাইন : এরিকের জন্য গঠিত ট্রাস্টে কী কী সম্পদ রয়েছে?
বিদিশা এরশাদ : প্রেসিডেন্ট পার্কে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যেখানে এরিক বসবাস করে। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার একটি এফডিআর এবং গুলশানে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে!
বিদিশা এরশাদ : ঠিকই শুনছেন। জাতীয় পার্টির একসময় আমি প্রেসিডিয়াম মেম্বার ছিলাম। মাঝখানে আমার সেই পদ স্থগিত করা হয়েছিল। আমি জনগণের জন্যই এবং এরিক এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : রাজনীতিতে এলে আপনার লক্ষ্য কী হবে?
বিদিশা সিদ্দিক : তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশের উন্নয়নই আমার লক্ষ্য। তরুণদের শক্তি এবং সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের সেবা করতে চাই। আমি দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা করে এসেছি। যে কারণে একটু অন্যভাবে চিন্তা করি। পরিবেশবান্ধব সবকিছু করতে চাই। দেশের জলবায়ু এবং পরিবেশ রক্ষায় গাছ রোপণ, বৃষ্টির পানিকে সর্বত্র কাজে লাগাতে চাই। যেমন- ভারতের সিকিমে ঝরনার ও বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে খাওয়া-গোসল সবকিছুই করছে। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বাকস্বাধীনতা দিতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : জাতীয় পার্টিতে এই মুহূর্তে দুটি মেরুকরণ রয়েছে, এর বাইরে নেতাকর্মীরা নতুন করে আপনাকে কেন বেছে নেবে?
বিদিশা সিদ্দিক : জাতীয় পার্টিতে যারা আছেন, তাদের সবাই প্রবীণ হয়ে গেছেন। রংপুরবাসী মনে করে, এই মুহূর্তে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব প্রয়োজন। আমার মধ্যে তারুণ্যের যে শক্তি আছে, প্রবীণদের মধ্যে তা নেই। আমি সিনিয়রদের সম্মান করি। সিনিয়রদের উচিত আমাদের জায়গা করে দেওয়া। যদিও এ অনুশীলনটা আমাদের দেশে নেই। রাজনীতিতে কেউ কাউকে জায়গা দিতে চায় না। রাজনীতিতে নিজেকে জায়গা করে নিতে হয়।

এনটিভি অনলাইন : গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এবং রওশন এরশাদ আপনার পুনরায় রাজনীতিতে আসার বিষয়টাকে কীভাবে দেখবেন?
বিদিশা সিদ্দিক : জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্বে তাঁরা রয়েছেন। আমাকে তাঁরা কীভাবে নিচ্ছেন সেটি বিষয় নয়। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করব। কে, কীভাবে নেবে তা নিয়ে ভাবছি না। বরং উনারা দীর্ঘদিন ধরে দলে আছেন। মানুষকে তাঁরা কী দিতে পারলেন সেটাই দেখার বিষয়। আমি তাঁদের সম্মান করি। তাঁদের উচিত আমাদের জায়গা করে দেওয়া। এ ছাড়া রওশন এরশাদের সঙ্গে আমার সুসর্ম্পক রয়েছে। উনার সঙ্গে সবসময় কথা হয়। আমি উনার ছেলের খোঁজ-খবর রাখি। তিনিও আমার এবং আমার ছেলে এরিক এরশাদের খোঁজ-খবর নেন। রওশন এরশাদকে কখনো অসম্মান করিনি। মোট কথা, এরশাদ পরিবারের সবাই এক।
এনটিভি অনলাইন : ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে?
বিদিশা সিদ্দিক : আপনি ঠিক বলেছেন। আসলে গুঞ্জন কখন শোনা যায়; মানুষ যখন কিছু নিয়ে আশা করে তখনি গুঞ্জন উঠে। এর আগে অনেক উপনির্বাচনেও জনগণ আমাকে দেখতে চেয়েছে। আমাদের জাতীয় পার্টির নেতারাও প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য। জনগণ চাইলে আমিও এই উপনির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

এনটিভি অনলাইন : এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারছে কি?
বিদিশা সিদ্দিক : রাষ্ট্র চলতে গেলে বিরোধী দল থাকতে হয়। জাতীয় পার্টি একটি বিরোধী দল। সরকার ভালো কাজ করলে সেটার সঙ্গে একমত পোষণ করতে হয়। দ্বিতীয়ত, খারাপ কিছু হলে সমালোচনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন সময় সরকারের কিছু ব্যর্থতা নিয়েও জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে সমালোচনা করে না। এটার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগে জাতীয় পার্টি সমালোচনা করেছে। তবে সরকারের বড় সমালোচক সরকার নিজেই।
এনটিভি অনলাইন : রংপুরবাসীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
বিদিশা সিদ্দিক : রংপুর আমার শ্বশুরবাড়ি। তাদের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে। সবাই ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়। আমিও সবাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করে আসছি। আমি ব্যক্তির ইচ্ছের জন্য রাজনীতিতে কখনো আসিনি। জনগণ চাইলে আমি রাজনীতিতে আসব। বিশেষ করে, রংপুরবাসী মনে করে জাতীয় পার্টিতে তারুণ্যের শক্তি প্রয়োজন। তারা আমার মধ্যে সেই শক্তি পায়। আমার মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমি জনগণের জন্য রাজনীতিতে আসব।
এনটিভি অনলাইন : আপনি করোনার মধ্যে সামাজিক কর্মকাণ্ড করেছেন এ বিষয়ে…
বিদিশা সিদ্দিক : বিদিশা ফাউন্ডেশন নামে আমার একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে। এ সংগঠনের মাধ্যমে আমি রাজধানীতে মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। গত মার্চ থেকে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এতে দেশ-বিদেশের অনেকেই সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। আমি করোনার সময়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) সম্প্রদায় এবং ভাসমান মানুষকে সহায়তা করছি।