এর আগে দেলোয়ার ওই নারীকে দুবার ধর্ষণ করেন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে ওই নারীকে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন দুবার ধর্ষণ করেন। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা এবং দেলোয়ারের ভয়ে তিনি সে কথা প্রকাশ করতে পারেননি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে নির্যাতিত ওই নারী এমন অভিযোগ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফজলুল কবিরের নেতৃত্বে একটি তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে। পরে দুপুরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আল-মাহমুদ ফজলুল কবির এসব কথা বলেন।
ওই নারীর বরাত দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, ‘ওই নারী যেহেতু নিরক্ষর ও গ্রামের মানুষ তাই তিনি ধর্ষণের প্রকৃত সময়টি বলতে পারেননি। তবে তিনি বলেছেন, প্রথমবার দেলোয়ার তাকে ধর্ষণ করেন বছরখানেক আগে, তার নিজের বাড়িতে রাতের বেলায়। এরপর দ্বিতীয়বার তিনি ধর্ষণের শিকার হন গত রোজার ঈদের আগে। একটি নৌকায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়।’
দ্বিতীয়বার ধর্ষণের সময় দেলোয়ারকে কালাম নামের আরেক যুবক সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই দেলোয়ার ওই নারীকে নৌকায় ডেকে পাঠান। পরে কালামকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন দেলোয়ার। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন দেলোয়ার বাহিনীর বাদলসহ অন্যরা। এরপর তাঁরা গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাঁরা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। সেখানে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। তবে দেলোয়ারকে আসামি করা হয়নি। এরই মধ্যে দুটি মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসে তল্লাশি চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাঁর দেহ তল্লাশি করে করে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব-১১-এর ডিএডি আব্দুল্লাহ শেখ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। আজ তাঁকে এই মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে দেলোয়ারের মাছের খামারে র্যাব ১১-এর একটি টিম অভিযান চালায়। এ সময় ওই মাছের খামার থেকে সাতটি তাজা ককটেল ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়।