ওমর আলী ডিজিটাল যুগের ‘স্মার্ট রিকশাচালক’

Looks like you've blocked notifications!

গায়ে আয়রন করা শার্ট, তার সঙ্গে মানানসই প্যান্ট, চকচকে পালিশ করা জুতা, স্যুট, টাই আর সানগ্লাস, মাথায় টুপি, হাত ঘড়িও বাদ যায়নি। এভাবেই সাহেব সেজে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান ওমর আলী (২৮)।

স্থানীয়রা তাঁকে ‘স্মার্ট রিকশাচালক’ বলেন। কারণ স্মার্ট লোকজন তাঁর রিকশাতেই বেশি চড়তে পছন্দ করেন। ফ্যাশনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলারও চেষ্টা করেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও আচরণে মুগ্ধ হন যাত্রী ও অন্য সবাই। তাই অধিকাংশ যাত্রীর কাছ থেকে তিনি বকশিশ হিসেবে পান বাড়তি ভাড়া।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওমর আলী কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের কাদিরখিল গ্রামের বাসিন্দা মো. আবিদ আলীর ছেলে। ওমর আলী জানান, তিনি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। এরপর অভাবের কারণে লেখাপড়া এগোয়নি। বর্তমানে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার।

ওমর আলী জানান, তিনি প্রায় এক বছর ধরে কচুয়াসহ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় রিকশা চালান। স্মার্ট হয়ে রিকশা চালানোতে তিনি সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই শখ করে আমার রিকশায় ঘুরে বেড়ায়, আমার সঙ্গে সেলফি তোলেন, আমায় চা-বিস্কুট খাওয়ান। এগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। এছাড়া অনেকেই আমার আচরণে খুশি হয়ে ২০ টাকার ভাড়া অনেক সময় বেশি দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। স্মার্ট হওয়ায় কোনো যাত্রী তুচ্ছ করে না। খারাপ ব্যবহারও করে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার আটটি প্যান্ট, আটটি শার্ট, তিন জোড়া জুতা, তিনটি টাই আর শীতে ব্যবহারের জন্য দুটি ব্লেজার আছে। এসব আমি রিকশা চালিয়ে রোজগারের টাকা দিয়েই কিনেছি।’

কেনো এই বেশে রিকশা চালান? এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর আলী বলেন,  ‘আমাদের জন্য তো  কোট-স্যুট টাই পড়া নিষেধ না। আজকাল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুন্দর করে সাজানো হয়। তাই আমিও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরিপাটি হয়ে সুন্দর পোশাক পরে প্রতিদিন রিকশা চালাতে রাস্তায় বের হই। এতে করে একইসঙ্গে দুটো লাভ হয়, প্রথমত যাত্রী বেশি পাই, দ্বিতীয়ত ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। তাই শরীর-মন দুটিই ভালো থাকে।’

তিনি আরো বলেন,‘ইনশাল্লাহ যতদিন বাঁচবো, সুন্দর পোশাক পরে রিকশা চালানোর চেষ্টা করব।’

ওমর আলীর এই অবস্থা জানতে চাইলে অন্য রিকশাচালক অহিদ, মজিব, শুক্কুরসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমাগো (আমাদের) গর্ব ওমর আলী। হেয় (সে) ভালা (ভালো), আধুনিক স্মার্ট’, হেয় অইলো (হলো) ডিজিটাল যুগের রিকশাচালক।’