ওসি প্রদীপ রিমান্ড শেষে কারাগারে
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে চতুর্থ দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি দল প্রদীপকে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে হাজির করে। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল ইসলাম আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রদীপ কুমারকে চার দফায় ১৫ দিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। আজ চতুর্থ দফায় রিমান্ড শেষে আমরা তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করেছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
‘মামলার দুই নম্বর আসামি প্রদীপ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি’, যোগ করেন খাইরুল ইসলাম।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এরপর গত ৬ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত। এরপর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত গত ২৮ আগস্ট তাদের তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত আলী গত রোববার এবং এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত গতকাল সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবারই চতুর্থ দফায় প্রদীপের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য তিনজন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রাজীব। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অন্য তিন আসামি হলেন- পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এ ছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত আছেন।