কখন মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া, জেলার যা বললেন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে তাঁকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানের নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কখন মুক্তি পাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তির বিষয়ে সব কাগজপত্র এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মুক্তির ব্যবস্থা করবে।’
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কারা অধিদপ্তর এখনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব ইসলাম।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাহবুব ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জানানো হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দপ্তরকে জানাবে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আমাদের কাছে (কেন্দ্রীয় কারাগারে) নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
জেলার মাহবুব ইসলাম আরো বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ওই নির্দেশনায় উল্লেখ থাকবে কখন বা কোন সময়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দেব।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পান খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে তা বেড়ে ১০ বছর সাজা হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
বর্তমানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সবশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাঁর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে মুক্তির আবেদন জানান। এই অবস্থার মধ্যেই আজ তাঁর মুক্তির সিদ্ধান্তের কথা জানালেন আইনমন্ত্রী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে দণ্ড মওকুফ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছেন।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখে মতামত দেওয়ার জন্য। আমরা আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছি।’
‘বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া কোথায় থাকবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি তাঁর বাসায় থাকবেন। তিনি স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় চিকিৎসা নিতে পারবেন।’
বিদেশে চিকিৎসা করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিদেশ যাওয়ার মানে সুইসাইড করার শামিল।’
ছয় মাস পর কি দণ্ড স্থগিতের সময় বাড়ানো হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ছয় মাস আগে শেষ হোক, তারপর পরের বিষয় বিবেচনা করা হবে।’