কচুরিপানা থেকেও ভালো খাবার বের হবে, বাণিজ্যমন্ত্রীর আশা
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আশা প্রকাশ করেছেন, ‘একদিন কচুরিপানা থেকেও এমন কিছু খাবার বের হবে, যার ফুড ভ্যালু অনেকখানি ভালো।’ সেদিনের অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
গতকাল সংসদে কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২০ পাসের আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রীর কচুরিপানা-সংক্রান্ত বক্তব্যটি তোলেন। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বলা হয়েছে কচুরিপানার কথা। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকাই, আজ থেকে ৪০/৪৫/৫০ বছর আগে তখন ঢাকাতে কেউ কচুরলতি খেত না। কিন্তু আজকে কচুরলতি একটা সুস্বাদু, খুব প্রয়োজনীয় তরকারি হিসেবে চালু হয়েছে। ফিরে যেতে চাই, আরেকটা কথায়। আমরা চা খাই, চা পাতা দিয়ে। কিন্তু নতুন যে কনসেপ্ট আসছে বাজারে সেটা হলো পাটের পাতা থেকে চায়ের পাতার মতো এক ধরনের তৈরি হচ্ছে ড্রিংকস, যেটা কিন্তু অত্যন্ত সুস্বাদু, সেটাও আসছে। হয়তো এ কথা আগে বললে বলা হতো এটা আবার কেমন কথা পাটের পাতা দিয়ে চা খাওয়া। দিন তো বদলাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন চিন্তা, নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি আসছে। যার জন্য মনে করি যে কচুরিপানা বলা হয়েছে, পেপারে একটা নিউজ আসছে।’
‘মাশরুম। মাশরুম তো দেখলে বলা হতো হারাম খাবার ওটা, ব্যাঙের ছাতা। কনসেপ্ট তো বদলাচ্ছে। হয়তো এমন দিন আসবে কচুরিপানা থেকেও এমন কিছু খাবার বের হবে, যার ফুড ভ্যালু অনেকখানি ভালো, লেটস ওয়েট ফর দ্যাট। সেদিনের অপেক্ষা আমরা করে থাকতে পারি।’
এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদে বলেন, ‘আমরা কী বলব যে দেশে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়রা বলেন, গরু যদি কচুরিপানা খেতে পারে তো মানুষ খেতে পারবে না? আমরা তো সেই আজব দেশের প্রাণী, মাননীয় স্পিকার।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তব্যের সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমাদের প্ল্যানিং মিনিস্টার (পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান) বলতেছে, গরু যদি কচুরিপানা খেতে পারে তো মানুষ কেন খেতে পারবে না? আমাদের দেশে কি এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে? মাননীয় স্পিকার, আমি এ কথা জানতে চাচ্ছি। মাননীয় প্ল্যানিং মিনিস্টার আজকে আসেননি দেখছি। না হলে আমরা কিছু কচুরিপানা নিয়ে আসছিলাম, তো উনাকে দিতাম।’
এ কথা শুনে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও হাসতে দেখা যায়।
রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘উনি যদি বলেন যে আচ্ছা গরুর খাবার কি মানুষ খেতে পারে নাকি মানুষের খাবার গরু খেতে পারবে? কোনটা? ঘাসের মধ্যেও তো অনেক ভিটামিন আছে। তো, আমরা ঘাস খাই না কেন? তাই না মাননীয় স্পিকার?’
গত সোমবার রাজধানীতে কৃষি গবেষকদের পুরস্কার প্রদানের এক অনুষ্ঠানে হাস্যরস করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘কচুরিপাতা নিয়ে গবেষণা করুন। কচুরিপানার পাতা খাওয়া যায় না কোনোমতে? গরু তো খায়। গরু খেতে পারলে আমরা খেতে পারব না কেন?’ এরপরই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার ব্যাখ্যা করে গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কচুরিপানা খেতে নয়, কচুরিপানা নিয়ে গবেষণার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণা হবে সীমাহীন। গবেষণার কোনো সীমিত বিষয় থাকতে পারে? তাহলে গবেষণা হলো কোথায়? এটা বলতে পারবেন না, ওটা হবে না, এটা করতে পারবেন না, জাত গেল, এসব ব্যাপার না। আমি বলেছিলাম, কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা করেন। এবং হাস্যরসে বলেছিলাম, এটা খাওয়া যায় কিনা। কচুরিপানা যদি খেতে পারি কোনো ক্ষতি আছে? একজন বলল, গরু-ছাগল তো খায়। গরুর নাম কেন এলো, অসম্মান হয়ে গেল। গরুর দুধ খেতে পারি, আবার গরু দেখতে লজ্জা লাগে।’