করোনাকালে ইন্টারনেট চাহিদার চাপ সামাল দিতে পারাই বড় সাফল্য
করোনাকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে দেশের ভার্চুয়াল জগৎ সচল রাখাও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। করোনাকালে ইন্টারনেট চাহিদার এ চাপ বেশ সফলভাবেই সামাল দিতে পেরেছেন বলে মনে করেন ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আজ সোমবার এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক টেলিফোনে সাক্ষাৎকারের খ্যাতনামা এ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার ৫ জি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তুলে ধরেন তাঁর মন্ত্রণালয় ও সরকারের কর্মকাণ্ড। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
গত মার্চ মাসের শুরু থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনারভাইরাস বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ১৭ মার্চ উচ্চ শিক্ষালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। এসব তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার ও নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা বাসায় থেকে দাপ্তরিক কাজ করেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চলে অনলাইনে, লকডাউনের সময় অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও অনেকেই কেনাকাটা করেন অনলাইনে।
মন্ত্রী জানান, করোনাকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ায় আমাদেরও কাজের বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের দক্ষ জনশক্তি বেশ সফলভাবেই এ চাপ মোকাবিলা করে ইন্টারনেট সুবিধা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে তাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। জানুয়ারি মাসে এ ভাইরাস প্রাণঘাতী রূপ নেয়। অনেক শহর ও জনপদে লকডাউন ঘোষণা করা হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একটি জনপদ যখন লকডাউনে পড়বে তখন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেই যোগাযোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশেও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এমন একটি আশঙ্কা ছিল বিশেষজ্ঞদের। সেজন্য করোনাকালে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা দিতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা কয়েক মাস সময় পেয়েছিলাম। আমরা তখনই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। আমাদের এ প্রস্তুতি অনেক কাজে দিয়েছে। করোনাকালে ইন্টারনেটের বাড়তি চাপ সত্ত্বেও মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা দিতে পেরেছি, এটা আমাদের বড় সাফল্য।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও তুলে ধরেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি জানালেন, করোনাকালে দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আর ইন্টারনেটের নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ ৩৮ হাজার। বর্তমানে মোট ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে নয় কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। এর মধ্যে নয় কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষই মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাকিরা অন্যান্য মাধ্যমে ব্যবহার করেন। দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৮০ লাখ ৮৪ হাজার, যা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার। আগে আমাদের দেশে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো। আর এখন ১৭ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মোবাইল ফোনের কলরেট বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের জীবনমান বদলে দিয়েছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। কৃষক এখন আর তার উৎপাদিত পণ্যের দাম নিয়ে প্রতারিত হচ্ছে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন বাজারের দাম জানতে পারছে। ঘরে বসে মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। অথচ এক সময় মানুষের কাছে মোবাইল ফোন ছিল স্বপ্নের মতো। এটি বিত্তশালীদের বিষয় ছিল। একটি মোবাইল সেটের দাম ছিল সোয়া লাখ টাকা। আউটগোয়িং কলরেট ছিল ১৭ থেকে ২০ টাকা। ইনকামিং কলরেট ছিল ১২ টাকা। এ পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। একটি প্রতিষ্ঠানের মনোপলি ব্যবসা থেকে আমরা মোবাইল ফোনকে বের করে সমাজের তৃণমূলে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এখন মোবাইল ফোনের কলরেট মানুষের হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
৪ জি থেকে ৫ জিতে উত্তরণের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০২১ সালে আমরা ৫ জির জগতে প্রবেশের চেষ্টা করছি। এটি নিশ্চয় ইন্টারনেটের দৃশ্যপট বদলে দেবে। বিশাল তথ্য তখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডাউনলোড করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের বেলায় আমাদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হলো শুধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ আবহাওয়া ও জলবায়ু এবং জিআইএস তথ্য দিতে পারবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের বড় সুবিধা হলো প্রথম স্যাটেলাইটের মতো বিভিন্ন ফ্যাসিলিটিস, কোম্পানি গঠন, গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করতে হবে না। অরবিটাল স্লটও আমাদের ভাড়া করতে হবে না। আমাদের যে অরবিটাল স্লট আছে সেখানে পাশাপাশি দুটি স্যাটেলাইট রাখা যাবে। ফলে কাজটা অনেক সহজ হবে।
গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া এ সরকারের বড় সাফল্য উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা দেশের প্রায় ৯০ ভাগ ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে পেরেছি। দুই হাজার ৪০০টি ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক মনিটর ইন্টিগ্রেটেড করা হয়েছে। দুই হাজার ৪৭৭ ইউনিয়নে যন্ত্রপাতি ও ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মাধ্যমে এক হাজার ২০০টি ইউনিয়ন সেন্টারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে।