করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দাফন যেভাবে

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন ‘বিশেষ প্রক্রিয়ার’ মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

আজ বুধবার বিকেলে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অতি দুঃখের সঙ্গে বলছি, করোনায় আক্রান্ত একজন মারা গেছেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছরের ওপরে এবং তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিসহ আরো বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।’

আইইডিসিআর পরিচালক আরো বলেন, ‘এই রোগী একজন ইতালি ফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দশজন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন। গতকাল তাঁর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আজ সকালে তিনি মারা গেছেন। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিসহ আরো বিভিন্ন সমস্যায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউ-তে নেওয়া হয়। আজ সকালে তিনি মারা যান।’

নিজেদের ব্যবস্থাপনায় মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি জানান, মৃত ব্যক্তির লাশ আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্যাকেট করে দেবেন এবং পরিবহনের ব্যবস্থাও করবে।  

‘মৃত ব্যক্তির লাশ প্যাকেট করার আগে আমরাই ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, গোসল করিয়ে দেব। এরপর কাফনের কাপড় পড়িয়ে প্যাকেট করা হবে। সেই প্যাকেট কোনো অবস্থাতেই কেউ খুলতে পারবে না। প্যাকেট খুলে আত্বীয়-স্বজন লাশের মুখ দেখার সুযোগ নেই।’

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘লাশ প্যাকেট করার পর তা খোলা হলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই যেভাবে আমরা প্যাকেট করে দিবো সেভাবে আমাদের লোক দিয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনায় কবর দেওয়া হবে।’  

তবে আইইডিসিআর পরিচালক বলেছেন, ‘স্বাভাবিক ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, একজন মৃত ব্যক্তির জন্য যে ধরনের জানাজার প্রয়োজন হয় তাতে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। লাশ সামনে রেখে জানাজা পড়া যাবে এবং তাতে অংশ নেওয়া যাবে।’

আজকের ব্রিফিংয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরো জানান দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন পুরুষ। দুইজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছে।

‘এ ছাড়া একজন ইতালি থেকে আসা একজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। আরো চারজন ঝুঁকিতে রয়েছেন। যাদের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রয়েছেন।’

আইইডিসিআর পরিচালক আরো বলেন, ‘এ ছাড়া নতুন করে ৩৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৬ জনকে আইসোলেশন এবং ৪২ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া  হয়েছে।’

করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলেও দাবি করেছে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিঙ্গাপুর, চীন থেকেও আমাদের কিট দিয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।’     

আইইডিসিআর পরিচালক জানান, নতুন আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজন সদ্যবিদেশ (দুজন ইতালি, একজন কুয়েত) থেকে এসেছেন এবং অপরজন তাদের একজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার দেশে আরো দুজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং আক্রান্তদের মধ্যে দুজনই পুরুষ।

গত ১৬ মার্চ দেশে তিনজনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর। যাদের মধ্যে দুজন শিশু এবং একজন নারী।

গত ১৪ মার্চ দেশে আরো দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল, যাদের মধ্যে একজন ইতালি থেকে এবং অন্যজন জার্মানি থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন।

গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন। তবে প্রথম আক্রান্ত হওয়া তিনজনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।