দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকজনকে বিদেশফেরতদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে তারা আশ্বস্ত করছেন যে, সাধারণ জ্বর ও ঠান্ডা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

তাদের পরামর্শ হলো- পরিষ্কার থাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং কারো মাঝে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেলে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) যোগাযোগ করা। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯-এ বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত দুই লাখ চার হাজার ৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন আট হাজার ২৩২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮২ হাজার ৮৬৬ জন। বর্তমানে বিশ্বের ১৭০ দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন।

কোভিড-১৯ এর লক্ষণের মাঝে রয়েছে মাথা ব্যথা, কাশি, জ্বর, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ও শরীরে ব্যথা। ভাইরাসটির আক্রমণে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়। পরে শুকনো কাশির সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

অধ্যাপক আজাদ বলেন, এখন প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সন্দেহে বেশি রোগী আসছেন। সাধারণ জ্বর-কাশি হলেও চলে আসছেন। এতে অন্য রোগীরা আতঙ্কিত হন।

এই চিকিৎসকের পরামর্শ হলো, শ্বাসকষ্ট বেশি হলে দ্রুত পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে আসুন। আর যদি কম শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে আগে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যে কারো করোনাভাইরাস সন্দেহ হলে আগে পরীক্ষা এবং তারপর চিকিৎসা নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

করোনাভাইরাস নিয়ে অধ্যাপক আজাদের উপদেশ হলো, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের থেকে দূরে থাকুন। গণপরিবহন বা বাইরে চলাফেরায় সতর্ক থাকুন। প্রতিদিন কাজের আগে ও পরে বা পরিবহনে ও অফিসে ঢুকার আগে ও পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সিসল দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন।

অধ্যাপক আজাদ পরামর্শ দিয়ে বলেন, বেশি বেশি পানি পান করুন। সাধারণ জ্বর হলে প্যারাসিটামল এবং গলা ব্যথা হলে হিস্টাসিন খান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. আফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে শিশুদের অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে। প্রতিদিনই ৩-৪ শিশুকে করোনাভাইরাস সন্দেহে নিয়ে আসা হচ্ছে। এটি হচ্ছে মূলত আতঙ্কের কারণে।

আফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম। তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। তাঁর মতে, বিদেশ থেকে ফেরা কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর সর্দি, কাশি ও জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যথায় আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ ওষুধ খেতে হবে।

শিশু বিভাগের এই চিকিৎসক আরো বলেন, ছোট বাচ্চাদের সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরের কারো সংস্পর্শে নেওয়া যাবে না। বাসায় রাখা ভালো। কাজের লোক বা গৃহশিক্ষক থেকেও সচেতন থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ছোট-বড় সবাইকে পরিষ্কার রাখতে হবে।

তাঁর পরামর্শ হলো, বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালত যে যেখানেই থাকুন সতর্ক থেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে দূরত্ব বজায় রেখে। সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে গণপরিবহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেককে পরিবহনে উঠার আগে হ্যাক্সিসল ব্যবহার করে উঠতে হবে। বাস, ট্রেন ও নৌপরিবহনে যাত্রী ওঠানোর আগে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

যদি করোনাভাইরাস সন্দেহ হয় তাহলে দ্রুত সময়ে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। যিনি বিদেশ থেকে এসেছেন তাঁকে অবশ্যই আলাদা হয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।