করোনার অমানিশার আঁধার কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ : রাষ্ট্রপতি
নভেল করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সরকারের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বঙ্গভবনে আজ বুধবার সকালে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় শেষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের হলওয়েতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা এবং বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ঈদুল আজহার এই জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
রাষ্ট্রপতি শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, ‘রাতের আঁধার শেষেই ঝলমলে রোদের আলোতে ভরে ওঠে পৃথিবী। করোনার অমানিশার আঁধারও সহসাই কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবে আমাদের দেশ। কিন্তু, এর জন্য দরকার সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অর্থাৎ, সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা।’
মহামারি পরিস্থিতির ক্রমাবনতির মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও এখন তা ‘পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের সব নাগরিকের জন্য টিকাদান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তাই এ কর্মসূচিকে সফল করতে সরকারের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে ইচ্ছা করলেই কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা এককভাবে একটি দেশের পক্ষে নিরাপদ থাকা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই বিশ্বকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে হলে উন্নত-অনুন্নত ও ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বহুজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
বঙ্গভবনের দরবার হলে আজ সকালে কোরবানির ঈদের জামাত শেষে মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের হলওয়েতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গভবনের ‘অতি প্রয়োজনীয়’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েন রাষ্ট্রপতি। পরে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দেন। মারাত্মক সংক্রামক করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মত এবারও ঈদের দিন বঙ্গভবনে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘কোরবানি আমাদের মধ্যে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। এবার মুসলিম বিশ্ব এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করছে যখন করোনার ভয়াল থাবায় গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত।
‘বাংলাদেশেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব ক্রমান্বয়ে প্রকট হচ্ছে। করোনার কারণে দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জীবন বাঁচানো প্রথম অগ্রাধিকার হলেও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জীবিকার গুরুত্বও অনস্বীকার্য।’
মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকার যে বহুমুখী কর্মসূচি নিয়েছে, সে কথাও রাষ্ট্রপতি বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অসচ্ছল ও নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবেও বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদনশীল প্রতিটি খাতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেও সরকার সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করি, সকলেই সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি সম্পন্ন করবেন এবং যথাসময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সচেষ্ট থাকবেন।
‘আমি দেশের আপামর জনগণের প্রতি কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।’