করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দ্বিগুণ

Looks like you've blocked notifications!

একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে ৪২ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। কাজ হারানো, আয় কমে যাওয়াকে এর কারণ বলছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ধনী ও গরিবের বৈষম্য আরো বেড়েছে বলে গবেষণার তথ্য বলছে।

বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ আর ২০১৮ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে তাতে বড় ধাক্কা দিয়েছে কোভিড-১৯। করোনার অভিঘাতে দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হয়েছে, তৈরি করেছে নতুন গরিব। আর শহরের তুলনায় গ্রামে গরিবের সংখ্যা বেশি বেড়েছে বলে সানেমের গবেষণায় উঠে এসেছে।

সানেমের গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি আপার পোভারটি রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ ভাগ। সারা বাংলাদেশে আমাদের লিঙ্কেজ সেটা কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সুতরাং, ঢাকার অর্থনীতি যদি ভালো না হয়, তাহলে রংপুরের অর্থনীতি ভালো করার কোনো কারণ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘হঠাৎ করেই সেটা করোনা পরিস্থিতির কারণে নিচে নেমে গেল। এটা কি অস্থায়ীভাবে হলো, নাকি স্থায়ীভাবে ক্ষতি হলো- সেটা জানতে হবে। আরেকটা জিনিস জানতে হবে, করোনার কারণে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা এই ক্ষতিগুলোকে পূরণ করতে পারল কি না।’

দারিদ্র্যের পাশাপাশি বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্যও। সানেমের গবেষণা বলছে, ধনীদের আয় বাড়লেও, আয় কমেছে গরিবদের। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ করতে হয়েছে অনেককেই।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয় সাধারণত ভোগ দিয়ে। কিন্তু দারিদ্র্য যে বহুমুখী ধারণা, যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসায়ও এর প্রভাব দেখা যায়, সানেমের জরিপ এই প্রথম এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিচ্ছে। শিক্ষা দারিদ্র্য বেড়েছে, শিক্ষায় ব্যয় কমেছে, বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থায় বেশির ভাগই অংশ নিতে পারছে না—এমনকি বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা আগের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় কতটা কম কার্যকর, সেটিও জানতে পারলে আরো ভালো হতো।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দারিদ্র্যের পাশাপাশি বৈষম্য আরো কিছুদিন থেকে যাবে। এর থেকে খুব তাড়াতাড়ি আমরা মুক্তি পাব না। কারণ, যেসব উদ্যোগ দরকার সেটা আমরা আগেও দেখতে পাইনি; করোনার সময়েও আমরা সেই ধরনের সংস্কার দেখছি না।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করার আহ্বান তাদের।