করোনায় আক্রান্ত র‍্যাব ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম

Looks like you've blocked notifications!
র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ছবি : সংগৃহীত

ক্যাসিনো ক্লাব, খাদ্য কারখানা, হাসপাতাল, ফার্মেসি কিংবা দোকানপাটে একের পর এক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলিয়ে বেড়ানো আলোচিত র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সানজিদাও করোনায় আক্রান্ত। সারওয়ার আলম নিজেই গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে এ তথ্য জানান। এ সময় সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

সারওয়ার আলম ফেসবুকে লেখেন, ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ। আলহামদুলিল্লাহ, শারীরিকভাবে ভালো আছি। সবার নিকট দোয়া ও ক্ষমার দরখাস্ত রইল।’

পরে সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। নমুনা পরীক্ষায় আমাদের দুজনেরই করোনা পজেটিভ এসেছে। আমি বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার স্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

চলতি বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমণের সেই শুরুর সময় থেকে সারওয়ার আলম রাজধানীর বিভিন্ন গুদাম, দোকান কিংবা ফার্মেসিতে ভুয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস ও মাস্কের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করেন। শুধু তাই নয়, করোনাকালে জনসাধারণের মধ্যে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও কাজ করে গেছেন।

রমজান মাস এলেই অনেক ব্যবসায়ী নানামুখী অবৈধ তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। আর তখনই উদয় হন সারওয়ার আলম। ফুটপাত থেকে শুরু করে খাদ্যের ফ্যাক্টরি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বেড়ান তিনি। শুধু রমজান মাস নয়, ১২ মাসই তিনি নানা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন। একের পর এক অভিযান চালিয়ে তিনি অবৈধ ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন।

২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ‘চার মাস আগে দেওয়া সাজার আদেশের কপি সরবরাহ না করায়’ র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে তলব করেন হাইকোর্ট। পয়লা ডিসেম্বর তাঁকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে আবেদনকারীকে সাজার আদেশের কপি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাঁকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে আদেশের কপি সরবরাহের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছিল। সাতদিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

এদিকে চলতি বছরের ১১ মার্চ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে সারওয়ার আলম, আক্তারুজ্জামান ও নিজাম উদ্দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা (ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা) বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক রিট আবেদন করা হয়েছিল। চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (সিসিবি ফাউন্ডেশন) পক্ষে এ আবেদনটি করা হয়েছিল।

সারওয়ার আলম প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালে। ফার্মগেটে ওভার ব্রিজ বাদ দিয়ে যারা সড়কে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন, তাঁদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করেছিলেন তিনি। তবে, এখন পর্যন্ত তাঁর পরিচালিত অভিযানের মধ্যে অন্যতম ছিল ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ফকিরাপুল ক্যাসিনোতে অভিযান। তারপর থেকে তিনি একের পর এক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পারিচালনা করে ক্যাসিনো সম্রাটদের গেপ্তার করা শুরু করেন। ওই দিনই ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস  ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযান চালান তিনি। এ সময় ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অবৈধ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

এর পর থেকে তিনি একে একে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে নানা স্থানে হানা দিতে শুরু করেন। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নিকেতনে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালান সারওয়ার আলম। অভিযানে তাঁর কার্যালয়ে তল্লাশি করে অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন তিনি।