করোনায় ছুটির এক মাস, বন্দিজীবনেও মৃত্যুর হানা
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে সরকারঘোষিত ‘সাধারণ ছুটি’র এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা।
এ সময়ে করোনাভাইরাসে দেশে ১৫২ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩ জন। এ তালিকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে। এ সময়ে বন্দিজীবন কাটাচ্ছে মানুষ। তবু মৃত্যুর মিছিল থামছে না।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এর প্রকোপ। করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। স্থগিত হয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও।
এ ছাড়া ১৯ মার্চ থেকে বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে সরকার। এ বিষয়ে ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই ভাষণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এ সময় কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে দিন দিন করোনার সংক্রমণ বাড়ায় পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দিনরাত কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসনের সদস্যরা। করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, পুলিশ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাংবাদিকরাও।
এদিকে করোনার দেশ কার্যত লকডাউন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বড়, ক্ষুদ্র, মাঝারি সবস্তরের ব্যবসাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প। গার্মেন্ট মালিকরা দাবি করেছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ১৪৬টি কারখানায় ৩.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।
এসব কারখানায় ২২ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোকাবলায় গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
করোনা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রণোদনা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরইমধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিটেন্স, আমদানি ও রপ্তানি, ট্রান্সপোর্ট খাত ও টুরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সময় নিয়ে হলেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
তবে দিন যত যাচ্ছে বেকারত্ব, অসহায় দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার বেড়েই চলেছে রাজধানীসহ সারা দেশে। লকডাউনের মধ্যে বেকার হয়ে পড়া অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ত্রাণের আশায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় করছে। লকডাউনের শুরুর দিকে বেশ কিছু সংগঠন অসহায় মানুষকে ত্রাণ দিতে দেখা গেলেও, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব তৎপরতা কমে এসেছে। সব মিলিয়ে সংকটের মধ্যে দিন কাটছে অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর।