করোনায় ভৈরবে পাদুকাশিল্পে প্রণোদনা দাবি
মহামারি করোনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পাদুকাশিল্পে ধস নেমে এসেছে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার কারখানার মালিক, কাঁচামালসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবসায়ী, পাইকারি বিক্রেতা এবং কারখানায় কর্মরত প্রায় দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। আয়-রোজগারের পথ বন্ধ থাকায় চরম দৈন্যতায় পড়েছে তারা।
জানা যায়, সারা বছর যেমন যাক, মূলত রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করেই এখানকার পাদুকাশিল্পের অর্থনীতির চাকা ঘুরে। গত বছর মৌসুমের আগ মুহূর্তে লকডাউনের কারণে কযেকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। সে ক্ষতির কিছুটা কাটিয়ে উঠার আগেই এবার আবারও লকডাউনের কবলে পড়ে ভৈরবের পাদুকাশিল্প। ফলে দুই দফা বিপদে এখন এই শিল্প চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। দুচোখে অন্ধকার দেখছে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার দাবি করছে তারা।
রাজধানী ঢাকার পরই দেশের পাদুকাশিল্পের সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে নদীবন্দর ভৈরবে। বিগত প্রায় ৪০ বছরে এই শিল্প এ অঞ্চলে ফুলে-ফেঁপে একটা মহীরূহে রূপান্তরিত হয়েছে। ছোট বড় মিলিয়ে ১০-১২ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে এখানে। যার মধ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ রপ্তানিমুখী আট থেকে ১০টি বড়পরিসরের কারখানাও রয়েছে। শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ওইসব কারখানার প্রতিটিতে কাজ করে ২০০ থেকে ৩০০ শ্রমিক। আর হাতে তৈরি কারখানাগুলোতে কাজ করে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক।
এসব কারখানায় ছোট বড় সবার পছন্দের নানা ডিজাইন এবং নানা রঙের পাদুকা তৈরি করেন এখানকার নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। এসব উৎপাদিত জুতা বিক্রির জন্য এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পাইকারি মার্কেট। গুণগত মানসম্পন্ন এবং টেকসই জুতা উৎপাদনের ফলে দেশে এবং বিদেশে ভৈরবের জুতার বেশ সমাদৃত। ফলে চাহিদাও বেড়ে চলেছে দিন দিন।
কারখানা মালিকরা জানান, বর্তমানে কিছু কারখানায় সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে অল্প আকারে উৎপাদন চললেও বেশিরভাগ কারখানাই বন্ধ আছে। এ ছাড়া গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসতে পারায় উৎপাদিত জুতা বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদিত জুতার মজুদ বাড়ছে, আটকে যাচ্ছে পুঁজি। এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের প্রণোদনা দাবি তাদের। অন্যথায় এ শিল্পে বড় রকমের বির্পযয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা তাদের।
সু মেটারিয়ালস্ সমিতির সভাপতি হাজি মো. শাহীন জানান, পাদুকাশিল্পের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যবসায়ী সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পায়নি। উৎপাদিত পাদুকা বিক্রি করতে না পারায় কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না, তাদের বকেয় দিতে পারছে না। আবার তারাও আমদানিকারকদের বাকি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলামিন মিয়া বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা মাত্র পাঁচ ভাগ কারখানার মালিকরা পেয়েছে। গত বছরের লকডাউনের সময় সব বন্ধ ছিল। এ বছর কারখানা সীমিত আকারে খোলা থাকলেও দোকানপাট, গণপরিবহণ বন্ধ। এ কারণে অনেক জুতা অবিক্রিত রয়ে গেছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে না পেরে কারখানার মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই এ শিল্পকে টিকাতে হলে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ হুমায়ুন কবির বলেন, পাদুকাশিল্প ভৈরবের ঐতিহ্য। পাদুকা শিল্পকে বাঁচাতে, লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজান বলেন, পরপর দুই বছরের লকডাউনের ফলে এ শিল্প অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারখানার মালিক এবং শ্রমিকদের একটি তালিকা থাকতে হবে এবং সংগঠনগুলোকে সরকারের শিল্পমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাহলে সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পাদুকাশিল্পের কথাটি মনে রাখবে এবং তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।