করোনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন, গোরস্থানে জিয়ারত আর ঈদের নামাজ বন্ধ!

Looks like you've blocked notifications!
পাবনায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাফন করায় গোরস্থানে জিয়ারত-ঈদের নামাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ছবি : এনটিভি

পাবনা সদরের মালিগাছা ইউনিয়নের মালিগাছা মজিদপুর গোরস্থানে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে সরকারি বিধিবিধান মেনে দাফন করা হয়। এজন্য গোরস্থান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা সেখানে কবর জিয়ারত এবং মসজিদে ঈদের নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে আশেপাশের গ্রামের মানুষ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এলজিইডির ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী আলতাফ হোসেন ফিরোজ (৫৬) গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুর-১২ এর বেসরকারি রিজেন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আজ সোমবার ঈদের দিন ভোরে কাজী আলতাফ হোসেনকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন করা হয় মালিগাছা ইউনিয়নের মালিগাছা-মজিদপুর গোরস্থানে। তিনি মালিগাছা গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন।

এদিকে কাজী আলতাফ হোসেন ফিরোজকে দাফনের পরপরই মসজিদের মাইকে প্রচার করে দেওয়া হয় করোনা আক্রান্ত রোগীকে দাফনের কারণে সংক্রমণ রোধে এই গোরস্থানে কবর জিয়ারত ও ওই মসজিদে ঈদের নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ঈদের সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। মানুষ নামাজের জন্য বিভিন্ন দিকে যেতে শুরু করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির জন্য ঈদের জামাত ওয়াজিব। বর্তমানে করোনা দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্তেই আমরা মসজিদে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নামাজ পড়তেও দেওয়া হয়নি। বছরে অন্তত দুটিবার প্রাণভরে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কবর জিয়ারত আর দোয়া করা হয়। কিন্তু মসজিদ ও গোরস্থান কমিটি সেটিও আমাদের করতে দিলো না।’

মালিগাছা গ্রামের বাসিন্দা পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর নির্দেশনাবলীতে করোনা আক্রান্ত রোগীকে কবরস্থ করা যাবে না এমন কোনো বিধি নেই। আর সরকারি বিধি মেনেই বিশেষ টিম এই দাফন সম্পন্ন করেছে। সেখানে করোনা সংক্রমণের কোনো প্রশ্নই আসে না। অথচ অতি উৎসাহী হয়ে একটি মহল ঈদের নামাজ ও কবর জিয়ারত বন্ধ করে দিয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়।’

এ ব্যাপারে একাধিকবার মুঠোফোনে মালিগাছা মজিদপুর গোরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস অবস্থান করে না। তার পরও প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে। সেহেতু করোনা সংক্রমণের কোনো ধরনের সুযোগ নেই।’

মসজিদে ঈদের নামাজ ও কবরস্থান জিয়ারত বন্ধের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লকডাউন কেবলমাত্র প্রশাসন করে থাকে। স্থানীয় জনগণ বা মসজিদ কমিটির লকডাউন করার এখতিয়ার নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’