করোনা আক্রান্তদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষার প্রয়োজন নেই : আইইডিসিআর

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় টানা তিন দিন প্যারাসিটামল ছাড়া যদি শরীরে জ্বর না আসে তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ তিনি করোনা নেগেটিভে পরিণত হয়েছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, সেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির নেগেটিভ ফল পাওয়ার জন্য পুনরায় নমুনা পরীক্ষার দরকার হবে না।

অর্থাৎ আগে যে বলা হচ্ছিল, করোনা আক্রান্ত রোগী যদি পর পর দুইবার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নেগেটিভ আসে তাহলেই তাঁকে করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে। নতুন নিয়মে আগের সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে আইইডিসিআর।

তবে করোনা আক্রান্ত রোগী যদি নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকেন; তাহলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে সেই রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিতে পারেন। এমন একটি গাইড লাইন চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছে আইইডিসিআর। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজনীতা থাকছে না। তবে কেউ যদি খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকেন তাহলে তাঁর নমুনা পরীক্ষা করার প্রয়োজনীতা থাকলে চিকিৎসক সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে সাধারণত করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার সুযোগ থাকছে না।’

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর যদি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন ছাড়াই টানা তিন দিন জ্বরমুক্ত থাকেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে তিনি সুস্থ। এমন অবস্থার রোগীকে নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে ১৩ দিন পর তাঁকে করোনা নেগেটিভ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরাও তাই জানাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হিসাব ১৩ দিন না হয়ে ১৪ দিন ধরা হবে বলে নতুন গাইডলাইনে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর যদি ১৪ বা ১৫ দিনের মাথায় সেরে যায় এবং তারপরের তিন দিন যদি প্যারাসিটামল ছাড়া জ্বর না আসে সেক্ষেত্রে তখন থেকে অর্থাৎ নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে ১৭ বা ১৮ দিন পর তিনি সুস্থ বলে গণ্য হবেন। মূল কথা হচ্ছে, আগে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ বলে গণ্য করতে হলে যে পরপর দুটি পরীক্ষায় যে নেগেটিভ আসতে হতো, আগামীতে আর সেটির দরকার থাকছে না।’

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন,  ‘আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিন পর জ্বর নেই কিন্তু কারো যদি হালকা কাশি থাকে তাতেও খুব একটা সমস্যা হবে না। তাকে অসুস্থ বলা যাবে না। এ ছাড়া ১৪ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ভাইরাসটি আর ছড়ানোর সুযোগ থাকে না। কিন্তু যারা আইসিইউতে থাকবে এবং গুরুতর অসুস্থ হবে ১৪ দিন পরও তাদের কাছ থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকতে পারে।’

যেহেতু নমুনা সংগ্রহের তারিখ থেকে সবকিছু গণণা করা হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে সবাই নিজেকে হোম আইসোলেশনে রাখবেন। নতুবা নমুনা দেওয়ার পর আপনি বাইরে গেলে আপনার দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন থেকে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। সম্প্রতি মাহবুব আলম নামের একজন করোনা পজিটিভ ব্যক্তিকে ফোন করা হয় হটলাইন থেকে। তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পর হটলাইন থেকে ফোন করা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আগামী ২ জুন আপনার নমুনা সংগ্রহের ১৪ দিন পূর্ণ হবে। ১৪ দিন পর যদি আপনার শরীরের আর কোনো করোনার উপসর্গ না থাকে তাহলে আপনি সব স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করা হবে না। আপনাকেও আর পরীক্ষা করা হবে না।’