করোনা প্রতিরোধে শিশুদের মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম

Looks like you've blocked notifications!

নভেল করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ বাংলাদেশে চলছে। এরই মধ্যে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সবার মাস্ক ব্যবহারের প্রতি জোর দিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এটি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর কাছাকাছি কেউ অবস্থান করলে খুব সহজেই নিশ্বাসের মাধ্যমে তাঁর শরীরে প্রবেশ করে। হাতের স্পর্শের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারলেও মূলত বাতাসে ভেসে বেড়ানোর মাধ্যমে অন্যকে আক্রান্ত করার হারই বেশি।

মাস্কের ভুল ব্যবহারের কারণে খুব সহজেই প্রতিরোধ ভেঙে শরীরে প্রবেশ করতে পারে করোনাভাইরাস। প্রাপ্তবয়স্করা মাস্ক পরার কৌশল জানলেও শিশুরা অনেক সময় মাস্ক ঠিকমতো ব্যবহার পারে না। তাই, শিশু-কিশোরদের মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞেরা।

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে চিকিৎসকেরা মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও তা পালন করার ক্ষেত্রে সর্বত্র মতবিরোধ দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে তা অমান্যের জন্য জরিমানার ব্যবস্থাও রাখা হযেছে। মাস্ক ব্যবহারে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। চশমা ব্যবহাকারীদের চশমা ঘোলা হয়ে যাওয়া মতো বিড়ম্বনাও ঘটে। দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহার বড়দের জন্য যেখানে অস্বস্তির কারণ, শিশুদের মাস্ক পরার বিষয়ে উদাসীনতা খুব অস্বাভাবিক নয়।

শিশুদের মাস্ক পরার ক্ষেত্রে করণীয় ঠিক করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ যৌথভাবে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তাতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর স্পষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে তারা। দেশের কোভিড বিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট করোনা ইনফো সম্প্রতি শিশুদের মাস্ক ব্যবহারের কৌশল জানিয়েছে। এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য করোনা ইনফো থেকে তা হুবহু প্রকাশ করা হলো।

১. বারো বছরের বেশি বয়সি শিশুদের প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বিবেচনা করেই মাস্ক পরাতে হবে।

২. ছয় বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি ডব্লিউএইচওর পরামর্শে। আর, যাদের বয়স ছয় থেকে ১১ বছরের মধ্যে, তাদের প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে মাস্ক পরাতে হবে। মাস্ক পরিধান ও খুলে নেওয়ার বিষয়টি একজন অভিভাবক সবসময় তদারকি করবেন।

৩. পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক না করা হলেও নিশ্চিত আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে অবস্থানের ক্ষেত্রে মাস্ক পরাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

৪. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে মাস্ক পরাতে জটিলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে মাস্ক না পরার পরামর্শই থাকছে।

৫. সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুরা সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করাই যথেষ্ট। তবে, যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস-জনিত সমস্যা বা অন্যান্য জটিল রোগ থাকবে, তাদের মেডিকেল মাস্ক পরানোই উচিত।

৬. মাস্ক পরিধানের ক্ষেত্রে শিশু ও বড়দের ধরন একই। সরাসরি মাস্কের ভেতরের পৃষ্ঠ কিংবা বাইরের পৃষ্ঠে হাত দেওয়া যাবে না। মাস্কে হাত না দিয়ে কেবল হাতল ধরে তা মুখে স্থাপন করতে হবে। মাস্ক পরার আগে এবং মুখ থেকে মাস্ক খুলে নেওয়ার পর সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

৭. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে কোনো বাসায় যদি ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষজন থাকেন, সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বাসায় শিশুদের অন্তত কাপড়ের মাস্ক পরতে হবে।

৮. শিশু ও অন্যান্য বয়সিদের জন্য খেলাধুলা, ব্যয়াম ও শারীরিক কসরত চলাকালীন মাস্ক খুলে রাখার পরামর্শই বারবার এসেছে।

৯. যেসব শিশু নানা কারণে মাস্ক পরতে পারে না, কিন্তু সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে ফেইসশিল্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

১০. দুই বছরের বেশি বয়সি শিশুদের মাস্ক পরতে অভ্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে।

১১. শিশুরা ভ্যাকসিন নিলেও স্কুলে মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

১২. শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ছোট করে তৈরি মাস্কই তাদের পরাতে হবে। বড়দের মাস্ক পরালে তা কার্যকর নাও হতে পারে।

১৩. মাস্ক পরিধানের সময় অনেক সময় বড়রা হেঁয়ালিপনার পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাই শিশুদের মাস্ক সঠিকভাবে খাপ খেয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে পরিবারের একজন বয়স্ক সদস্যকে। পরিষ্কার হাতে শিশুর মুখে মাস্ক এমনভাবে সেঁটে দিতে হবে, যাতে সবদিক থেকে তা খাপ খেয়ে লেগে থাকে।

১৪.  শিশুদের মাস্কও বারবার ব্যবহার করা যায়। তবে, এ ক্ষেত্রে মাস্কটি ধোয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ একদিন পরপর মাস্ক ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।

১৫. শিশুদের স্কুলে পাঠানোর সময় তার ব্যাগে অবশ্যই অতিরিক্ত মাস্ক দিয়ে রাখতে হবে। কোনো কারণে মুখে থাকা মাস্ক ভিজে গেলে, কিংবা দূষিত বা ব্যবহার অনুপোযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তা পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।