কাজ ও করোনার সঙ্গে বসবাসের শুরু

Looks like you've blocked notifications!

খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে আনিসুর রহমান ইজিবাইকে করে রাজধানীতে এসেছেন। বাস না পেলেও কাজে তো যোগ দিতে হবে, আসতে বাধ্য হয়েছেন। আনিসুরের বড় ভাই মোহাম্মদ তাবিবুর রহমান খুলনা থেকে মোটরসাইকেলে করে ঢাকায় ফিরেছেন। ঘটনা শনিবারের। শুধু তাঁরা নন, অফিসগামী মানুষ যে যেভাবে পারছেন, ঢাকায় ফিরছেন। আজ রোববার থেকে অফিস-আদালত খুলেছে। যাতায়াত ও জনসমাগম বেড়ে ঢাকা ফিরেছে দুই মাস আগের রূপে!

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আনিসুর রহমান আজ রোববার সকাল থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন। ব্যাংকার মোহাম্মদ তাবিবুর রহমানও অফিস করছেন। গণপরিবহন, দোকানপাট ও জনাসমাগম সবই চলছে, সর্বক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সর্তকতা। শহর চষে বেড়ানো কিংবা টাকা-পয়সার হিসাব কষা, সবই চলছে পুরোদমে। বেশ শোরগোল অবস্থা!

এমন অবস্থাকে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি

পরামর্শক কমিটি বলছে, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের হদিস মেলে। গত ২৫ মার্চ থেকে কার্যত লকডাউন আরোপ করে সরকার। কিন্তু সেদিন একজনও নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে একজন মারা যান। ততদিন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ৩৯ জন। আর গতকাল এক হাজার ৭৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন সর্বাধিক ২৮ জন। এই যখন পরিস্থিতি, তখন অফিস-আদালত খুলে গেছে। যদিও সব বিবেচনায় সরকারেরও আসলে খুব বেশি করার নেই। এভাবে আর কত! এ পরিস্থিতিতে আমাদের মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।

পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছিলেন, এ অবস্থায় নিয়মিত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়াবে-কমবে। তাই একসঙ্গে সব চালাতে গেলে আমাদের করোনার সঙ্গে বসবাসের চিন্তা শুরু করতে হবে। মানিয়ে নিতে হবে কাজ আর করোনাকে। অন্তত খেতে হলে তো আপনাকে কাজ করতে হবে। মাসের পর মাস কাজ না করলে খাবেন কী? আবার আমরা খুব ধনী, ব্যাপারটা এমনও না। সুতরাং আপনাকে বাইরে যেতে হবে। আবার নিজের সুরক্ষা নিজেকেই দিতে হবে। কারণ, কোভিড-১৯-এর টিকা না পাওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটি যাচ্ছে বলে মনে হয় না। সেটা তো দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার।

তবে এ পর্যায়ে আরো কঠোর লকডাউন দরকার ছিল বলে মত দেন পরামর্শক কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তবে ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই মাসের বেশি সময় আমাদের লকডাউন চলছে। তবুও তো সংক্রমণ কমছে না। আমরা একটু দেখতে চাই, সবকিছু স্বাভাবিক রাখলে পরিস্থিতিতে কোন দিকে যায়। যদি পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়, তাহলে আমরা আবারও প্রপার লকডাউনের দিকে যাব। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বৈশ্বিক বাস্তবতার হিসাব দেখতে গেলে আমাদেরও খানিকটা করোনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে গেলে সংক্রমণ হয়তো হবে, কিন্তু তা আপনাকে সেফ রাখত হবে। এভাবে আরো দীর্ঘদিন সাধারণ ছুটি রাখা তো আমাদের জন্য মুশকিল। পরিস্থিতিটা এমন, উই হ্যাভ টু লিভ উইথ করোনা।

মানুষ অফিস-আদালতে যোগ দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কীভাবে চলা উচিত, তা জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আপনি বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে বের হবেন। মাস্ক ঠিকমতো পরা আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বাইরে গেলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই প্রথমে আপনার ওয়াশরুমে যাওয়া উচিত। এরপর মাস্কসহ সব জামা-কাপড় আলাদা করে ধুয়ে তারপর ঘরে প্রবেশ করুন। এতে করে আপনার পরিবার খানিকটা নিরাপদ থাকবে।