কাদেরের মুখোমুখি করা হবে মুসা বিন শমসেরকে

Looks like you've blocked notifications!
ধনকুবের মুসা বিন শমসের (বাঁয়ে) ও আবদুল কাদের। ফাইল ছবি

আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসের। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে হাজির হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে। তাঁকে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে মেরুন রঙের একটি গাড়িতে করে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন মুসা বিন শমসের। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

মশিউর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের তিনটি বিষয়ে স্পষ্ট হতে ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ভুয়া অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল কাদেরের মুখোমুখি করা হবে মুসা বিন শমসেরকে। মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা ছিলেন প্রতারক আবদুল কাদের।

ডিবি পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আবদুল কাদেরের প্রতিষ্ঠানে শমসেরের একাধিক ছবি টাঙানো রয়েছে। তিনি নিজেকে শমসেরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ‘অ্যাডভাইজার’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। প্রতারক আবদুল কাদেরের কাছ থেকে মুসা বিন শমসের ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে করা কিছু চুক্তিপত্র উদ্ধার করা হয়। এসব বিষয় জানতেই মূলত শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘আবদুল কাদের চৌধুরীর আসল নাম, আবদুল কাদের মাঝি। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু, তিনি প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে, নিজেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দিতেন। নিজের এক কোটি ২০ লাখ টাকার প্রাডো গাড়িতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগিয়ে ঢুকতেন সচিবালয়ে। এবং আমরা শুনেছি, এভাবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আবদুল কাদের মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা সব মিলিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

এসব নানা অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ অক্টোবর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করা হয় আবদুল কাদেরকে। একই সঙ্গে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন সততা প্রোপার্টিজের চেয়ারপারসন ও আবদুল কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম ও অফিস সহায়ক আনিসুর রহমান।

এর আগে গত শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আবদুল কাদেরের আদি বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ভূমিহীন এক কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবা জীবিকার সন্ধানে সন্দ্বীপে পাড়ি জমিয়েছিলেন। মাছ ধরে ও মাঝির কাজ করে জীবিকা উপার্জন করতেন। এমন ভূমিহীন ভাসমান আবদুল কাদেরের ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে গুলশান-১ নম্বরের জব্বার টাওয়ারের প্রায় ছয় হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের অফিস রয়েছে। কারওয়ান বাজারেও রয়েছে আরও একটি অফিস। মিরপুর-৬ নম্বরে বসবাস করলেও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার।’

ডিবি প্রধান আরও জানান, আবদুল কাদের নয়তলা বাড়ি কিনেছেন গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। গাজীপুরের পুবাইলে রয়েছে আট বিঘার বাগানবাড়ি। ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে তাঁর একাধিক অ্যাকাউন্ট। যেখানে রয়েছে লাখ লাখ টাকা। অঢেল সম্পদের মালিক এ কাদেরের নেই কোনো বৈধ উপার্জন। প্রতারণা ও মিথ্যা তাঁর একমাত্র পুঁজি।’

আবদুল কাদের, তাঁর স্ত্রী ও সহকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় অস্ত্র মামলা, তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতি, বিভিন্ন প্রতারণা, ব্যাংকে নিয়োগ বিষয়ে কমপক্ষে অর্ধ ডজন মামলাও রয়েছে বলে জানায় ডিবি।