কারা ফটকেই মিলছে খাদিজাদের জীবন গড়ার হাতিয়ার

Looks like you've blocked notifications!
পুনর্বাসন কার্যক্রম কর্মসূচির মাধ্যমে দেওয়া সহযোগিতা নিচ্ছেন কারাভোগকারী খাদিজা। ছবি : এনটিভি

কারাগারের ফটকেই জীবন গড়ার হাতিয়ার পাচ্ছেন কারাভোগকারী। গত এক বছরে এভাবে ১২ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে এই পুনর্বাসন কার্যক্রম। যে তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে খাদিজার নাম।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম। তাদের দাম্পত্য জীবনে রয়েছে তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি একটি অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর ছয় মাস ১৮ দিন ধরে কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগারে থাকাকালে খাদিজা অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির মাধ্যমে সেলাই মেশিন চালানো শেখেন।

গত সপ্তাহে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজা। এরপর সোমবার তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ভবিষ্যৎ গড়ার হাতিয়ার সেলাই মেশিন। মুক্তির পর সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার, ইউনিসেফ চিফ এএইচ তৌফিক আহমেদ, প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজসহ আরও অনেকে।

জীবিকা নির্বাহের জন্য একইভাবে আরও ১১ জনের মধ্যে সেলাই মেশিন ও রিকশাভ্যান দেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচির আওতায়। এমন আরেক বন্দির নাম আবদুর রহমান। তিনি  বরিশালের হিজলা উপজেলায় নরসুন্দরপুরের বাসিন্দা। তিনি চুরি মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। এরপর দেড় বছর কারাগারে কাটে তাঁর।

আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকাতে রিকশা চালাতাম। একদিন এক যাত্রী আমার রিকশায় ওঠে। কিন্তু তিনি পুলিশ দেখে রিকশায় মালামাল রেখেই পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। সেই মামলায় দেড় বছর কারাভোগ করি আমি। কারাগারে আমি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেই। কারামুক্তির পরে তারা আমাকে একটি ভ্যানগাড়ি দেয়। সেই ভ্যান চালিয়ে এখন আমার পেটের খাবার যোগাই। কারাগার থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তা এখন আমার বাস্তব জীবনে কাজে লাগছে।’

অপহরণ, মাদক, চুরিসহ বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করে এরা ছাড়াও পুনর্বাসনের আওতায় এসেছেন লিনা বেগম, সাথী আক্তার, লাকি আক্তার, আয়শা, জসিম উদ্দীন, রতন হালদার, জেসমিন সুলতানা, পিয়ারা, খালেদা আক্তার ও কনা বেগম।

এ ব্যাপারে সমাজসেবার প্রবেশন কর্মকর্তা ও অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘সমিতির মাধ্যমে বন্দিদের আমরা কাউন্সিলিং করে থাকি। পাশাপাশি জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে মধ্যে সেলাই, কাঠমিস্ত্রী, বেতের কাজ, ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বন্দিরা যখন কারাভোগ করে বের হন, তখন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন ও ভ্যানগাড়ি। এ ছাড়া বন্দিদের বিনোদনের জন্য টেলিভিশন, খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। তাদের নিয়ে করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা মাদকবিরোধী কর্মসূচি।’