কিশোরগঞ্জে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের অধ্যক্ষ মো. আল-আমিনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১৯৮২ সালে জেলা শহরের নিউ টাউন এলাকায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে দানবীর ওয়ালী নেওয়াজ খানের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসাবে পরিচিতি পায়। ২০২০ সালের ২২ জুন প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে মো. আল-আমিনের যোগদানের পর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বাবু গত ৯ জুন অধ্যক্ষ মো. আল-আমিনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১২টি অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
কামরুল ইসলাম বাবুর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি পে-স্কেল লঙ্ঘন করে মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা না নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, কলেজের এফডিআর এর টাকা উত্তোলন ইত্যাদি। এমনকি নিজের অনিয়ম জায়েজ করতে কলেজের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদেরও উচ্চশিক্ষা ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দিচ্ছেন পিএইচডি ও এমফিল ভাতা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গত ২ আগস্ট তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন। অনুসন্ধান কমিটিকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটিতে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে আহ্বায়ক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা অ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারকে সদস্য করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বাবু জানান, লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষ মো. আল-আমিনের ক্ষমতার অপব্যবহার, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ ও কাল্পনিক ভাউচার তৈরি, পে-স্কেল-২০১৫ লঙ্ঘন করে মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরিকরণ এবং পিপিআর-২০০৮ উপেক্ষা করে উন্নয়ন কার্যক্রম করার ব্যাপারে তদন্ত অনুসন্ধানের আবেদন জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সালে স্থাপিত ১৫টি বিষয়ে অনার্স ও এমবিএ প্রফেশনাল সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে এইচএসসি, বিএম শাখা, ডিগ্রি (জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) কোর্সে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যাদের প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের কষ্টার্জিত টাকা অধ্যক্ষ সরকারি পরিপত্র বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করছেন। অধ্যক্ষ অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। সরকারি পে-স্কেল ২০১৫ লঙ্ঘন করে অবৈধ মনগড়া বেতন কাঠামো তৈরি করে ৯ মাসে কলেজ তহবিলের লাখ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। নন-এমপিও শিক্ষকদের চলমান ইনক্রিমেন্ট কর্তন, এমপিও শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালা বহির্ভূত মূল বেতন বৃদ্ধি করে বেতন তৈরি এবং অফিস কর্মচারীদের এমফিল ও পিএইচডি ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একাধিক শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সদস্যরা জানান, আনীত অভিযোগ অনেকাংশেই সঠিক। কলেজটিকে রক্ষা করতে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মো. আল-আমিন বলেন, অনুমোদিত স্কেলে বেতন-ভাতা নেওয়া হচ্ছে। স্কেলের চেয়ে বেশি আমি কীভাবে নিব? জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ ও কাল্পনিক ভাউচার তৈরি এসব অভিযোগ বানোয়াট। বাজেট পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে। সবকিছুই অনুমোদিত। অনুসন্ধান প্রতিবেদনেই প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে।