কিশোরগঞ্জে বড়ইতলা গণহত্যা দিবস পালিত

Looks like you've blocked notifications!
আজ বুধবার কিশোরগঞ্জে পালিত হয়েছে বড়ইতলা গণহত্যা দিবস। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জে পালিত হয়েছে বড়ইতলা গণহত্যা দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বর্বরোচিত এই দিনটিতে দাবি উঠেছে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানি বাহিনীর স্থানীয় দোসরদের বিচারের। এ ছাড়াও গণহত্যায় শহীদদের পূর্ণ তালিকা সম্পন্ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি সরকারিভাবে শহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে। আজ বুধবার সকালে জেলা সদরের যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা এলাকায় দিবসটি পালিত হয়।

অনুষ্ঠিত আয়োজনে বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ প্রকল্পের কাজ পূর্ণাঙ্গ সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানায় শহীদদের স্বজন ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

স্থানীয় বাসিন্দা ইসহাক ভুইয়া বলেন, ‘গণহত্যায় আমার বাবা, চাচা, ভাতিজাসহ পরিবারের ১৫ জন শহীদ হয়েছিলেন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এই গণহত্যায় আমার পরিবারের পাঁচজন শহীদ হয়েছিলেন।’

তাঁরা দুজনেই ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত সব শহীদের তালিকা করে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়নি। সরকারিভাবে শহীদদের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বড়ইতলা স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজও শেষ হয়নি। দিবসটিও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় না।

আজ বুধবার কিশোরগঞ্জে পালিত হয়েছে বড়ইতলা গণহত্যা দিবস। ছবি : এনটিভি

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভুপাল নন্দী জানান, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত পাক বাহিনীর স্থানীয় দোসরদের অনেকেই এখনও বেঁচে আছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ প্রকল্পের কাজ পূর্ণাঙ্গ সম্পন্ন করাসহ জেলার সব বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণহত্যায় সব শহীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার যশোদলের বড়ইতলা গ্রামে সংঘটিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। সেদিন পাকসেনা ও তাদের স্থানীয় দোসররা বড়ইতলা, চিকনিরচর, দামপাড়া, কালিকাবাড়ি, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর ও ভূবিরচর গ্রামের পাঁচ শতাধিক লোককে জোরপূর্বক ধরে আনে। তাদের কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের পাশে বড়ইতলা গ্রামের একটি স্থানে জড়ো করে। এক পর্যায়ে জড়ো হওয়া গ্রামবাসীদের লাইন করে দাড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। বর্বর এ হত্যাযজ্ঞে ৩৬৫ জন নিহত এবং আরও দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।

স্বাধীনতার পর ওই এলাকাটির নাম রাখা হয়েছে শহীদনগর। মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ওই এলাকায় হওয়ায় পাক হানাদারদের বিশেষ নজরদরিতে ছিল এলাকাটি।

বড়ইতলা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে নির্মিত বড়ইতলা স্মৃতিসৌধে আজ মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ছাড়াও কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পরে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলী সিদ্দিকী, যশোদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন, কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, প্রবীণ শিক্ষক মো. আজিজুল হকসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।