কুমিল্লার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড গ্রেপ্তার : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
কিছু নির্দিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা উপলক্ষে তাদের মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় ৭১টি মামলা করা হয়েছে। কুমিল্লায় হামলার পেছনের অভিযুক্ত মাস্টারমাইন্ডকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে ওই মাস্টারমাইন্ডের নাম-পরিচয়, তাকে কবে ও কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানায়নি।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আজ ‘র্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন’ শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার পূজামণ্ডপে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, আমরা অল্প সময়ে তাকে ধরে ফেলতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস। সে বিভিন্ন জায়গা পরিবর্তন করছে, এদিকে-সেদিকে যাচ্ছে। আমরাও তাকে ধরব। কী ঘটনা এবং কেন সে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা আপনাদের (মিডিয়া) সামনে বলব।’
‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে যতটুকু তথ্য ছিল আপনাদের দিয়েছি। এরপর আরো তথ্য পেলে আপনাদের দেওয়া হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের মানুষ যখন আনন্দের সঙ্গে দুর্গাপূজা উদযাপন করছিল, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মীয় স্থান এবং মূর্তিগুলোতে হামলার খবর আসে। সরকার সেসব ঘটনার নিন্দা জানায়। এসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতরে ও বাইরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বাহিনী দেশের ২২টি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি যেকোনো প্ররোচনায় সংযত থাকার এবং ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো বা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সবাইকে যে কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের সিনিয়র নেতারা বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিষয়ে ৭১টি মামলা করা হয়েছে। কুমিল্লায় হামলার পেছনের অভিযুক্ত মাস্টারমাইন্ডকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী স্থানীয় শক্তিগুলো এখনো সহিংসতা, বিদ্বেষ ও গোঁড়ামিকে উসকে দিতে তাদের বিষাক্ত মত প্রচার করছে। তারা দেশের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসবকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক এবং বহুত্ববাদী সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে—সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি। বহু শতাব্দী ধরে, বিভিন্ন ধর্ম, জাতি এবং ধর্মের মানুষ এই ভূখণ্ডে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি আমাদের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার সাংবিধানিক বিধান দ্বারা সুরক্ষিত। যদিও দেশের সর্বোচ্চ আইন তার সব নাগরিককে যে কোনো প্রকার বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতা থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, দেশের গণতান্ত্রিক শাসন নাগরিকদের ধর্ম, বিশ্বাস ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ নিশ্চিত করে। প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের অধিকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ সরকার ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ মূলমন্ত্রকে সমর্থন করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে সব ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। সরকার বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে তাদের কল্যাণের জন্য বিশেষ ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপন করেও সহায়তা করছে। এই বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, শান্তি ও বহুত্ববাদের মনোভাব সমুন্নত রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলঙ্কিত করা ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।