কৃষকের মাঠে ‘বঙ্গবন্ধু’

Looks like you've blocked notifications!
ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ মুজিব শতবর্ষকে ফুটিয়ে তুলে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবদুল কাদির। ছবি : এনটিভি

ফসলের মাঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ ফুটিয়ে তুলে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এক কৃষক। 

মাঠে চাষ করা লালশাক ও সরিষা দিয়ে স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও মুজিব শতবর্ষ এঁকেছেন কৃষক আবদুল কাদির। সেই নান্দনিক সৌন্দর্যের টানে তাঁর ফসলের মাঠে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজারো দর্শনার্থী।

ঈশ্বরগঞ্জের পাড়াখালবলা গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির। মুজিববর্ষ উদযাপন নিয়ে তিনি এক বছর ধরে পরিকল্পনা করে আসছিলেন নতুন কিছু করার জন্য।

কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কিছুই করা হয়। আমি একজন সামান্য কৃষক। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। তাই কিছু একটা করার চিন্তা পেয়ে বসে। এজন্য স্থানীয় পাড়াখালবলা গ্রামের বন্ধুমহল ও ডিজিটাল ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা পেতে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করি। সিদ্ধান্ত হয় আমার জমিতে লালশাক ও সরিষা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে মুজিব শতবর্ষ। থাকবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকসহ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহিদদের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় ফুল শাপলা।’

আবদুল কাদির আরো বলেন, ‘কথামতো আমার এক বিঘা জমিতে ভালোবাসার বৃত্ত এঁকে তার মাঝখানেই সব আঁকাআঁকির নান্দনিক কাজ শুরু করি। এ কাজে সহায়তা করে ডিজিটাল ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবকরা। পহেলা ডিসেম্বর থেকে কৃষক ও স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে ১৪ দিনে এক বিঘা জমিতে এঁকেছেন বঙ্গবন্ধু, স্মৃতিসৌধ, শাপলা আর নৌকার মতো দারুণ সব শিল্পকর্ম। দিন যতো যাচ্ছে, চারা বড় হওয়ার সঙ্গে চিত্রটি আরো স্পষ্ট ও আকর্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠছে।’

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর চেতনা আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এটি করা হয়েছে বলে জানান কৃষক আবদুল কাদির।

ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ মুজিব শতবর্ষকে ফুটিয়ে তুলে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবদুল কাদির। ছবি : এনটিভি

এরই মধ্যে নান্দনিক এ শিল্পকর্মের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি একজন কৃষকের অকৃত্রিম ভালোবাসার নান্দনিক শিল্পকর্ম দেখতে কৃষক আবদুল কাদিরের ফসলের মাঠে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজারো মানুষ।

ফসলের মাঠে এমন শিল্পকর্ম দেখতে আসা জেনিথ আহমেদ, ওয়ালি উল্লাহ ও জহিরুল ইসলাম জানান, এই শিল্পকর্ম তাদের খুব অনুপ্রাণিত করছে আর ভালোলাগার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর মতো জাতির আবেগময় এ ধরনের কাজে সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতার দাবিও জানায় তারা।

এ বিষয়ে কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসি। আগামী প্রজন্মকে তাঁর সম্পর্কে জানাতে একজন কৃষক মানুষ হয়ে এ রকম কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। মানুষ যেন এটা দেখে বঙ্গবন্ধুকে আরো গভীরভাবে ভালবাসেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, ‘প্রতি বছর আবদুল কাদির কৃষি বিভাগের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে তাঁর জমিতে ফসল করে থাকেন। তবে এবারে জমিটি শুধু প্রদর্শনী প্লট নয়। তিনি হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ জাতির নানা আবেগে আর ভালোবাসার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর জমিতে। তাঁকে আত্মপরিচয় ভাতা ও কৃষি উপকরণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে।’

২০২১ সালে তিনি যাতে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান সে বিষয়ে তার নামের প্রস্তাবনা পাঠাবেন বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষক আবদুল কাদিরের চিত্রকর্মে মুগ্ধ এলাকাবাসী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তাঁর মতো করে সবাই যেন বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সব অশুভ শক্তিকে মোকাবিলা করে এটাই হোক মুজিব জন্মশতবর্ষের অঙ্গীকার।