কৈশোর পেরোনো দুই ‘খদ্দের’ খুন করে মিরপুরের দুই নারীকে

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের একটি ফ্ল্যাটে দুই নারী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার সদ্য কৈশোর পেরোনো দুই তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই দুই তরুণ আগের অভিজ্ঞতা থেকেই রাতে খদ্দের হিসেবে ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সকালে লেনদেন সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়িয়ে দুই নারীকে খুন করেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে একজনের নাম ইউসুফ খান, তার বয়স ১৯। আরেকজন নিজের বয়স ১৭ বলে দাবি করেছে। কিন্তু পুলিশের ধারণা, তার বয়সও ইউসুফের মতোই হবে। তাঁরা বন্ধু। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির ডিবি শাখার পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান আসামিদের আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রাতে এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ডিবি পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল।

গত মঙ্গলবার রাতে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর রোডের ‘এ’ ব্লকের ১১ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে রহিমা বেগম (৬৫) ও তাঁর গৃহকর্মী (যৌনকর্মী) সুমি আক্তারের (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেখানে ক্রাইম সিনের সদস্যরা গিয়ে আলামত সংগ্রহ করেন। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রহিমা বেগম মাস ছয়েক আগে এই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে সেখানে রহিমার দ্বিতীয় স্বামী ও তাঁর এক কথিত ছেলে সোহেল যেতেন। রহিমার এক মেয়ে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তিনিই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রহিমার কথিত ছেলে সোহেলকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।  

একজন রাত কাটায় ঘরে, একজন বারান্দায়

গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ইউসুফ ও তাঁর বন্ধু রাত ১১টার দিকে একসঙ্গে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর রোডের ‘এ’ ব্লকের ১১ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার রহিমা বেগমের (৬৫) ফ্ল্যাটে যান। ওই ফ্ল্যাটে যৌনকর্মী সুমি আক্তার (২০) ছিলেন। সুমিকে পরিচালনা করতেন রহিমা বেগম। ওই ফ্লাটে বিভিন্ন সময় অনেক তরুণ-তরুণী যেতেন।

‘ইউসুফ ও তাঁর বন্ধুর কাছে সাড়ে তিন হাজার টাকা ছিল। কিন্তু রহিমা তাদের কাছে এক রাতের জন্য ছয় হাজার টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রহিমা, একজনকে ঘরের ভিতরে এবং আরেকেজনকে ফ্ল্যাটের বারান্দায় থাকার নির্দেশ দেন।’ 

পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, রাত কেটে যায়, সকালে টাকা নিয়ে সুমির সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। রহিমা তখন অন্য ঘরে ছিলেন। সুমি ঝামেলায় ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় এক তরুণ সুমিকে গলা চেপে ধরে। একপর্যায়ে সুমি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তখন ফ্ল্যাটের ভিতর থেকেই একজন রহিমা বেগমের মুঠোফোনে ফোন দেন। তাঁকে বলেন, ‘সুমি অজ্ঞান হয়ে গেছে, আপনি রুমের বাইরে আসেন’। রহিমা রুমের বাইরে এলে তাঁকেও গলা চেপে হত্যা করে দুজন।

পালিয়ে যাওয়ার সময় দুজন ফ্ল্যাট থেকে মোবাইল ফোন, ১৪ হাজার টাকা, স্বর্ণ ভেবে ইমিটেশনের তিনটি চেইন ও একটি কানের দুল নিয়ে যান বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা রাসেল।