কোটালীপাড়ার সেই ছাত্রলীগনেতা বহিষ্কার
সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। আজ সোমবার (৮ মে) জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও (ভারপ্রাপ্ত ) সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আমির হামজা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার গাছের একটি টেন্ডারের কাজ বাগিয়ে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদের চিঠি জাল করেন।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রলীগনেতা দোষ স্বীকার করে ইউএনওর কাছে লিখিত একটি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান। এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত ৪ মে (বৃহস্পতিবার) সংবাদ প্রকাশের পর সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়।
এরপর ৪ মে রাতেই জেলা ছাত্রলীগ অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শনোর চিঠি দেয়। সেই চিঠির জবাব না দেওয়ায় সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগ তাঁকে বহিষ্কার করে।
জানা গেছে, কোটালীপাড়ার ইউএনও রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ করার লক্ষে সড়কের দুই পাশের গাছ কাটার জন্য গত ১০ এপ্রিল ফরিদপুরের সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিটি কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন সুকৌশলে সংগ্রহ করেন। গাছ কাটার টেন্ডার বাগিয়ে নিতে সামাজিক বন বিভাগের ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নামের স্থলে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ বসিয়ে একটি জাল চিঠি তৈরি করেন তিনি। ওই চিঠিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজহারুল ইসলামের হাতে পৌঁছায়। ওই কর্মকর্তা ওই চিঠির বিষয়ে কোটালীপাড়ার ইউএনওর কাছে মৌখিকভাবে জানতে চান।
কোটালীপাড়ার ইউএনও ওই চিঠিটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাননি বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে জানান। পরবর্তী সময়ে গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নির্দেশে কোটালীপাড়ার ইউএনও এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন চিঠিটি জাল করেছেন বলে প্রমাণিত হয়।
এ ঘটনার পর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন জাল চিঠির দায় স্বীকার করে ইউএনওর কাছে লিখিত একটি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে জানতে ছোটনের মোবাইল ফোনে (০১৯১৩...৬১ ) বারবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, ছোটন তাঁর পদ-পদবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এভাবে তিনি ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে আসছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় জেলা ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ।
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বলেন, ‘সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে তাঁকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাব না দিয়ে সময়ের আবেদন করেন। তার সময়ের আবেদন আমরা গ্রহণ করিনি। সাংগঠনিকভাবে বিধি মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ওই টেন্ডারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা ছাত্রলীগের সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড। তাই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কোটালীপাড়ার ই্উএনও বলেন, ‘রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ করতে সড়কের দুই পাশের কোটালীপাড়া অংশের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কাটার জন্য ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে ৭১ লাখ ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ওই গাছগুলো টেন্ডার দিতে হলে মূল্য বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমার দপ্তর থেকে ফরিদপুর সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ছোটন ওই চিঠিটি জাল করে গাছের টেন্ডারটি নিজে ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি জাল চিঠি দেন। চিঠিটি জাল প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান। তাঁর এই মুচলেকার কপিসহ আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিবেন।’