কোনো ভয়-ভীতি আমাদের দমন করতে পারবে না : মির্জা ফখরুল
‘বর্তমান সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে’—এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ আমরা শপথ নিয়েছি—কোনো ভয়-ভীতি আমাদের দমন করতে পারবে না। বাংলাদেশকে কখনও দমন করতে পারেনি।’
আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সব কিছু মোকাবিলা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের সরকার গঠন করতে সক্ষম হব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর মাজার জিয়ারত করতে এসেছিলাম। ১৯৭৫ সালের পরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে একদলীয় শাসন থেকে মুক্ত করে নতুন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি অত্যন্ত সফল নেতৃত্বে যে দেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই সমৃদ্ধির বাংলাদেশে পরিণত করার যে কাজটি শুরু করে ছিলেন, যে ভিত্তি তিনি তৈরি করে ছিলেন, সেই জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়—যে গণতন্ত্রকে জিয়াউর রহমান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম লড়াই করেছেন, যিনি এখনও এ গণতন্ত্রের জন্য অন্তরীণ হয়ে আছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—তিনি নির্বাসিত হয়ে আছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, সে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে এখন অনুপস্থিত। এখন বর্তমানে অনির্বাচিত-অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজ নির্যাতন-হত্যা-গুম-খুনের মধ্য দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কিছু দিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি—যেই তাদের (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে, তারা আবারও তাদের পুরোনো কায়দায় একইভাবে ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমাদের ছাত্রদলের ওপর বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে নিতে চায়। মূল কথা হলো—গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এ দেশের মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, এরই মধ্যে রাজপথে রক্ত ঝরেছে। ইনশাআল্লাহ এর মধ্য দিয়েই দেশ গণতন্ত্র ফিরে পাবে।’
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতে অংশ নেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারস্টার শাহজাহান ওমর, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা খয়ারুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে, পরে একে একে অঙ্গদল ও বিভিন্ন সংগঠন জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এ সময় জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আজ সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। বেলা ১১টার আগেই মাজার প্রাঙ্গণ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।