কোন নীতিমালার আলোকে পিএইচডি দেওয়া হয়, জানতে চান হাইকোর্ট
প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন নীতিমালার আলোকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে, তা তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পিএইচডি জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত করে ঢাবির উপাচার্যকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এএফআর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ ছাড়া পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার আগে জালিয়াতির ঘটনা রোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচাই-বাছাই কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। এই জালিয়াতি রোধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন। গত ২২ জানুয়ারি এ বিষয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। এতে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইউজিসি চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়।
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন বলেন, রিট আবেদনে পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) অনুমোদন দেওয়ার আগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়ার বিধান করারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।
২০১৪ সালের দিকে ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ : অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। কাজ শুরু করার এক থেকে দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালে অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করে ফেলেন লুৎফুল কবীর। একটি পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার জন্য সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগে। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ করে প্রথমে সহ-তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি জমা দেন লুৎফুল কবীর। সহ-তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে লুৎফুল কবীর গবেষণার সহ-তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুককে ‘অনেক অনুনয়-বিনয়’ করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে এলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।
আবুল কালাম লুৎফুল কবীর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে আছেন।
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নজরে এনে এ বিষয়ে নির্দেশনা চাইলে আদালত নিয়মিত আবেদন করার নির্দেশ দেন। পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেছি।’
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকের এমন জালিয়াতি দুঃখজনক উল্লেখ করে এ ধরনের জালিয়াতি বন্ধ না হলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।